'আহলে কুরআন' একটি ভ্রান্ত ফির্কা

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর । যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদাত করার জন্য । এবং আমাদের মধ্যে প্রেরণ করেছেন বহু নাবী -রাসূলগণ (আ.)। যারা আমাদেরকে ডেকেছেন সত্যের পথে, দেখিয়েছেন জান্নাতের পথ যেমনিভাবে আল্লাহ সুবাহানওয়া তা'আলা নির্দেশ দিয়েছেন । তাই তাদের প্রতি আমাদের দূরুদ ও সালামসহ আল্লাহর পক্ষ হতে যথাযোগ্য মর্যাদা পাওয়ার প্রার্থনা করি । আমীন ।

এবার আসা যাক আলোচ্য বিষয়ে । যা আমাদের স্বল্পজ্ঞানী ও জ্ঞানহীন মুসলিমদের জন্য বড় হুমকি । যারা স্বল্প পরিসরে হলেও দুর্বল প্রকৃতির মানুষগুলোর মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে অনেকর মধ্যেই সৃষ্টি করছে নানা প্রশ্ন! যা একজন মানুষের ঈমান হননের জন্য যথেষ্ট! আর সেই দলটির নাম হলো 'আহলে কুরআন' ।

প্রায় ১১ মাস হলো সেই দলটির কিছু কর্মীর সাথে পরিচয় । যদিও সরাসরি না তবে অনলাইনে বহু তর্ক হয়েছে । তাদের দাবি হলো- (১) একজন মানুষের জন্য পবিত্র কুরআন যথেষ্ট, (২) হাদীস মানার প্রয়োজন নেই (৩) রাসূলের সুন্নাত বলে কিছু নেই! সবই আল্লাহর সুন্নাত । ........ অর্থাৎ তারা মুখে রাসূল (সা.) কে বিশ্বাস করলেও কর্মের (ইবাদাতের) ক্ষেত্রে করেছে বর্জন । এই আচরণ ই তাদেরকে মুসলিম থেকে বের হওয়ার জন্য যথেষ্ট ।

আর এই ফির্কাটি সম্পর্কে বহু আলেম একমত যে তারা ইয়াহুদী/ খ্রীষ্টানদের রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করে মুসলিমদের মধ্যে বিভ্রাণ্তি ছড়াচ্ছে । অর্থাৎ তাদের কার্যকলাপের সাথে মুসলিমের কোনো সম্পর্ক নেই! এবং তাদের দ্বারা ইসলামের কোনো উপকার হবে না! বরং তারা ইসলামকে বিকৃত করতে চাচ্ছে (!) যার বিরুদ্ধে সতর্ক হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেওয়া জরুরী প্রয়োজন!

আর এখন যদি কারোর মনে প্রশ্ন জাগে 'কেন আমরা তাদের বিরোধীতা করবো? / কিভাবে তাদের মূলহীন যুক্তির বিপক্ষে ইসলামকে দাঁড় করাবো ?' তাদের জন্য নিচের কিছু বিষয় জানা থাকা প্রয়োজন!

মহান আল্লাহ বলেন,
"বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে (মুহাম্মদ (সা.) কে ) অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।"- (সূরা আল ইমরান-৩১)

অর্থাৎ কোনো মানুষ যে আল্লাহকে ভালোবাসে তা প্রমাণ করতে হলে অবশ্যই রাসূল (সা.) কে ভালোবাসতে হবে । তাঁকে অনুসরণ করতে হবে । অন্যথায় কেউ ই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে না! আর রাসূল (সা.) কে অনুসরণ করা মানে উনার সকল আদেশ নিষেধ মেনে নেওয়া । আর রাসূল (সা.) বলেন, "তোমাদের কেউ ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, পুত্র এবং সমস্ত মানুষের চেয়ে প্রিয়তর হই।" -(সহীহ বুখারী-১৪)

মহান আল্লাহ আরো বলেন,
"হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না।" -(সূরা মহাম্মদ: ৩৩)

অর্থাৎ আমরা যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর আনুগত্য না করি (!) তাহলে আমাদের কোনো আমল ই কাজে আসবে না! আর রাসূল (সা.) এর আনুগত্য করা মানে তার দেওয়া নিয়ম-নীতি (হাদীস) মেনে নেওয়া । আর যে তা অস্বীকার করবে(!) অর্থাৎ রাসূল (সা.) এর হাদীসকে প্রত্যাখান করবে(!) সে মূলত আল্লাহর দেওয়া আদেশকেই প্রত্যাখান করলো(!) যা স্পষ্ট কুফরি!

ইমাম ইবনে হাজম (রহ.) তাঁর আল আহ্কাম গ্রন্থে লিখেছেন, 'কোনো বব্যক্তি যদি বলে যে, আমরা শুধু তাই গ্রহণ করবো যা কুরআনে পাওয়া যায়, তা ব্যতীত কিছুই গ্রহণ করবো না, তাহলে সে গোটা মুসলিম উম্মাতের ঐক্যমতের ভিত্তিতে কাফির'

আর হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেছেন, "খুব দ্রুত এমন সব লোকজন আসবে যারা কুরআনের প্রতি সন্দেহ নিয়ে তোমাদের সাথে বিবাদ করবে, তোমরা তাদেরকে সুন্নাত বা হাদীসের সাহায্যে গ্রেফতার করো । কারণ সুন্নাতের ধারক বা হাদীস বিশারদ মহান আল্লার কিতাব সম্পর্কে অধিক জ্ঞানের অধিকারী ।" -(বুখারী, সূচনা অধ্যায়)

অর্থাৎ হাদীস/ রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই । আর তা অস্বীকার করা স্পষ্ট কুফরি! তাই আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে যে, কোন ব্যক্তি যেন আমাদের অজ্ঞতা কিংবা স্বল্প জ্ঞানের সুযোগ নিয়ে আমাদের ঈমান কেরে নিতে না পারে ।

আমাদের সতর্কতার উদ্দেশ্যে- মহান আল্লাহ আরো বলেন,
" তোমাদের সংগী (রাসূল (সা.)) পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি। এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।" -(সূরা আন নাজম: ২-৩) "রাসূল (স.) তোমাদেরকে যা দেয় তা গ্রহণ করো, আর তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করে তাথেকে বিরত থাকো" -(সূরা আল হাশর: ৭)

অর্থাৎ রাসূল (সা.) এর প্রতিটা কর্ম পদ্ধতি, প্রতিটা আচরণ এবং প্রতিটা নসীহার মধ্যে রয়েছে আমাদের জন্য হেদায় । তাহলে কি করে আমরা রাসূল (সা.) এর সুন্নাহকে ব্যতীত সফলতার মুখ দেখতে পারি? -অসম্ভব!

পরিশেষে বলতে পারি, পবিত্র কুরআনে বহু আয়াত রয়েছে, যেখানে মহান আল্লাহ আমাদেরকে রাসূল (সা.) এর আনুগত্য করার আদেশ করেছেন! শুধু কি তাই? -তিনি আরো বলেছেন রাসূল (সা.) এর পদ্ধতি ব্যতীত আমাদের কোনো আমলই কাজে আসবে না! এমনকি তাও স্পষ্ট করেছেন যে রাসূল (সা.) এর প্রতি পূর্ণ আস্হা ব্যতীত কেউ জান্নাতেও যেতে পারবে না!

আল্লাহ আমাদেরকে এইসব ভ্রাণ্ত মতবাদ (আহলে কুর'আন) থেকে রক্ষা করুক । আমীন ।

''যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাসূলুল্লাহ'র মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।'' -(সূরা আহযাব, আয়াত: ২১)

"তোমরা যদি তাঁর (রাসূল (সা.) এর) আনুগত্য (সুন্নাহ অনুসরণ) কর, তবে সৎ পথ পাবে।" -(সূরা আন নূর: ৫৪)

Post a Comment

Previous Post Next Post