রাসূল (সাঃ) কে যাদুকর অপবাদ


রাসূল (সাঃ) এর প্রকাশ্য প্রচার অভিযানের কয়েক মাস অতিবাহিত হতে না হতেই হজ্জের মৌসম এসে উপস্হিত হল। যেহেতু এ মৌসমে আরব ভূমির দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন গোত্রের প্রতিনিধি দলের আগমন আরম্ভ হয়ে যাবে এবং যেহেতু মুহাম্মদ (সা.) তাঁদের নিকট প্রচারাভিজান শুরু করবেন, সেহেতু তাঁর সম্পর্কে সমাগত সকলের নিকট এমন এক কথা বলার প্রয়োজনবোধ করলেন যার ফলে মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর ক্রিয়ার সৃষ্টি করবে না। এ প্রেক্ষিতে এ ব্যাপের আলাপ- আলোচনা ও সলাপরামর্শের জন্য তাঁরা অলীদ বিন মুগীরাহর গৃহে সমাবেত হলেন।

অলীদ বললেন 'এ ব্যাপারে তোমাদের মতামত ঠিক করো, যাতে এ নিয়ে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে মতবিরোধ কিংবা মত পার্থক্যের সৃষ্টি না হয় এবং তোমাদের একজনের সাথে অন্যজন যেন মিথ্যা প্রতিপন্ন না করে ।'

অন্যরা বললেন, 'আপনি একটা মোক্ষম মন্তব্য ঠিক করে দিন তাহলেই তা আমাদের সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে ।'

তিনি বললেন, 'না তা হবে না বরং তোমরা বলবে আমি তা শুনব।'

অলীদের এ কথার পর কয়েকজন সমস্বরে উঠলেন, 'আমরা মন্তব্য করি যে, তিনি কাহিন।'

অলীদ বললেন, 'না আল্লাহর শপথ তিনি কাহিন (গণক) নয়।' আমরা অনেক কাহিন দেখেছি । ইনি তো কাহিনদের মতো গুণ গুণ করে গান গান না।'

অন্যরা বললেন, 'তাহলে আমরা তাঁকে একজন পাগল বলব ।'

অলীদ বললেন, 'না তিনি তো পাগল নন । আমরা পাগল দেখেছি । তাঁর মধ্যে সেরকম কোন আলামত প্রকাশ পায় না ।'

অন্যরা বললেন, 'তাহলে আমরা বলব যে তিনি একজন কবি ।'

অলীদ বললেন, 'তাঁর মধ্যে কবির কোন বৈশিষ্ট্য নেই যে, তাঁকে কবি বলা হবে ।'

অন্যরা বললেন, 'তাহলে আমরা তাঁকে যাদুকর বলব।'

অলীদ বললেন, 'এ ব্যক্তিকে যাদুকরও বলা যেতে পারে না। এ ব্যক্তি তো যাদুকরের মতো সত্য- মিথ্যা (উভয়ই) বলে না, ঝাড়-ফুঁক কিংবা গিরা দেয়া কোন কিছুই করে না ।'

অন্যরা তখন বললেন, 'আমরা তাহলে আর কী বলব?'

অলীদ বললেন, 'আল্লাহর শপথ! তার কথাবার্তা বড়ই মিষ্টি মধুর, তাঁর ভিত শিকড় বড়ই শক্ত এবং শাখা -প্রশাখা বড়ই মনোমুগ্ধকর। তোমরা তাঁর সম্পর্কে যাই বল না কেন, যারা তার সংস্পর্শে কিছুক্ষণ থাকবেন তাঁরা তোমাদের কথাবার্তাকে অবশ্যই মিথ্যা মনে করবেন। তারপর কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে পুনরায় তিনি বললেন, 'তাঁর সম্পর্কে যদি কিছু বলতেই হয় তাহলে খুব জোড় যাদুকর বলতে পারো। তাঁর এটা কিছুটা উপযোগী বলে মনে হতে পারে। তিনি এমন সব কথা বলেছেন যা যাদু বলেই মনে হয়। তিনি পিতা -পুত্রের মধ্যে, স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে, ভাই- ভাইয়ের মধ্যে, গোত্রে- গোত্রে বিভেদ সৃষ্টি করে দিয়েছেন।'

'শেষ পর্যন্ত তাঁরা তাকে যাদুকর বলার সিদ্ধান্তে একমত হয়ে সেখান থেকে প্রস্হান করেছেন।' -(ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, ২৭১ পৃঃ)

এ ব্যাপারে অলীদ সম্পর্কে সূরা মুদ্দাসসিরে ১৬ টি (১১- ২৬) আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। সেখানে তাঁর অপবাদের শাস্তির কথা বর্ণিত রয়েছে।


সূত্রঃ আর- রাহীকুল মাখতুম, ১০৮- ১০৯ পৃঃ


Post a Comment