সালাত বিষয়ক


●●● জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ ঠিক প্রবাহিত নদীর ন্যায়, যা তোমাদের কোন ব্যক্তির দরজার পাশে থাকে, যাতে সে প্রত্যহ পাঁচবার গোসল করে থাকে ।" -[মুসলিমঃ ২৩৩; তিরমিযীঃ ২১৪; রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ১০৫০]

●●● আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি দুই ঠান্ডা সালাত (ফজর ও আসর) পড়ে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে ।" -[বুখারীঃ ৫৭৪; মুসলিমঃ ৬৩৫; রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ১০৫৪]

●●● বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি আসর সালাত ত্যাগ করল, নিঃসন্দেহে তার আমল নষ্ট হয়ে গেল ।" -[বুখারীঃ ৫৫৩; রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ১০৫৯]

●●● আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেনঃ "ফিরিশতাগণ তোমাদের প্রত্যেকের জন্য দোয়া করেন, যতক্ষণ সে সেই স্থানে অবস্থান করেন, যেখানে সে সালাত আদায় করেছে, যতক্ষণ না তার ওযু নষ্ট হয়েছে । তারা বলেন, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও, হে আল্লাহ! তার প্রতি সদয় হও ।" -[বুখারীঃ ৪৪৫; মুসলিমঃ ৬৪৯]

●●● আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “বান্দা যখন সিজদায় থাকে তখন তার রবের সবচাইতে নিকটবর্তী হয়। কাজেই তোমরা (সিজদায় গিয়ে) বেশি করে দু’আ কর।” -[মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন- ১৪৯৮]

●●● রাসূল (সাঃ) বলেনঃ "তাদের মাঝে এবং আমাদের মাঝে চুক্তি হচ্ছে সালাতের, যে ব্যক্তি সালাত পরিত্যাগ করবে সে কাফের হয়ে যাবে।" -[আহমাদ, তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান; ইবনু মাজাহ, নাসায়ী, কিতাবুছ ছালাত, রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ১০৮৬]

●●● রাসূল (সাঃ) বলেনঃ "মুসলিম বান্দা এবং কাফের-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত পরিত্যাগ করা।" -[মুসলিম,কিতাবুল ঈমান]

●●● আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত । নাবি (সাঃ) বলেছেন, "যুহরের সময় হচ্ছে যখন সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়ে, আর মানুষের ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত, তথাআসরের সময় উপস্হিতহওয়া পর্যন্ত । আসরের সময় হচ্ছে (কোন বস্তুর ছায়া তার সমান হবার পর হতে) সূর্যের রঙ হালকা বা ফ্যাকাশে হলুদ বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত । মাগরিবের সময় সূর্যাস্ত থেকআরম্ভ করে পশ্চিমকাশে লালিমা নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত । ইশার সালাতের সময় হলো, (মাগরিবের সময় শেষ হওয়া থেকে শুরু করে) মধ্যরাত অবধিবিদ্যমান থাকে। ফজরের সময় সুবহে সাদিক থেকআরম্ভ হয়ে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত ।" -[মুসলিম- ১৭৩; ৬১২]

●●● আবু সা'ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি রসূল (সাঃ) এর নিকট শুনেছি তিনি বলেন: "ফজরের সালাতের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ফজরের সালাত ব্যতীত অন্যকোন সালাত (আদায় জায়েজ) নেই । আর আসর সালাতের পরেও সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন সালাত নেই ।" -[বুখারী: ৫৮৬; মুসলিম: ৮২৭]

●●● আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি ফজরের সালাতের এক রাকাত সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে আদায় করতে পারলো সে পূর্ণ সালাতই পেলো, আর যে ব্যক্তি আসর সালাতের এক রাকাত সূর্যাস্তের পূর্বে আদায় করলো, সে আসরের পূর্ণ সালাতই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পেলো ।" -[বুখারী, মুসলিম, বুলুগুল মারামঃ ১৬১]

●●● যুবাইর বিন মুত'ঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ "হে 'আবদি মানাফ এর বংশধরগণ, তোমরা কাউকে এ বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে এবং সালাত আদায় করতে নিষেধ করবে না যে কোন সময় যে কেউ তা করতে চায় ।" -[আবু দাউদঃ ১৮৯৪; নাসায়ীঃ ১৮৪; ইবনু হিব্বানঃ ১৫৫২, ১৫৫৩]

●●● ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ "সবচেয়ে উৎকৃষ্টতর পুণ্য কাজ হচ্ছে ওয়াক্তের প্রথমভাগে সালাত আদায় করা ।" -[তিরমিযীঃ ১৭৩; হাকিমঃ ১৮৮]

●●● আব্দুল্লাহ বিন যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, স্বপ্নযোগে দেখলাম, কোন ব্যক্তি আমার নিকট এসে বলছে- তুমি বল, 'আল্লাহু আকবর' আল্লাহু আকবর' অতঃপর তিনি পূর্ণ আযান বর্ণনা করলেন । এতে 'আল্লাহু আকবর' চারবার ছিল কিন্তু 'তারজী' ছিল না । আর ইকামাতের সব বাক্যই একবার করে ছিল কিন্তু 'ক্বাদকামাতিস সালাহ' বাক্যটি ছিল দুইবার । বর্ণনাকারী বলেছেন- সকাল হলে আমি আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর নিকটে (এসে স্বপ্টি বর্ণনা করলাম) । তিনি এ স্বপ্ন সম্বন্ধীয় বললেন- স্বপ্নটি অবশ্যই সত্য । -[আবু দাউদঃ ৪৯৯; ইবনু খুজাইমাহঃ ৩৭১; বুলুগুল মারামঃ ১৭৮]

●●● আবু সা'ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ "তোমরা যখন আযান শুনবে তখন মুয়াযযিন যা বলেন তোমরা তাই বলবে ।" -[বুখারীঃ ৬১১; মুসলিমঃ ৩৮৩]

●●● আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত । আযানের জবাবে- মুয়াযযিন যা বলবেন শ্রোতা সেসব বাক্যই বলবেন । তবে 'হায়ইয়া আলাস সালাহ, হায়ইয়া আলাল ফালাহ' দুটির জবাবে বলবে- 'লা হাওলা আলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ' । -[মুসলিমঃ ৩৮৫; বুলুগুল মারামঃ ১৯৪]

●●● আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ "আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দু'আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না ।" -[সহীহ ইবনু খুজাইমাহঃ ৪২৫, ৪২৬, ৪২৭; তিরমিযীঃ ৩৫৪৯]

●●● আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ "হায়িযা (সাবালিকা) মেয়েদের উড়না (মস্তকাবরণ) ব্যতীত আল্লাহ সালাত কবুল করবেন না ।" -[আবু দাউদঃ ৬৪১; তিরমিযীঃ ৩৭৭; ইবনু খুজাইমাহঃ ৭৭৫]

●●● আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । নাবী (সাঃ) সফরের অবস্হায় যখন নফল সালাত আদায়ের ইচ্ছা করতেন তখন তিনি সওয়ারী জন্তুটিকে কিবলামুখী করে নিয়ে আল্লাহু আকবর বলে (তাকবিরে তাহরীমা বেঁধে) সালাত আরম্ভ করতেন, তারপর তাঁর সওয়ারীর মুখ যে কোন দিকেই যেতো । -[আবু দাউদঃ ১২২৫, বুলুগুল মারামঃ ২১৪]

●●● আবু মারসাদ আল গানাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ "তোমরা কবরকে সামনে রেখে সালাত আদায় করবে না ও তার উপর বসো না ।" -[মুসলিমঃ ৯৭২, বুলুগুল মারামঃ ২১৭]

●●● আবু সা'ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ "কোন মুসলিম মসজিদে আসলে সে যেন তার জুতার প্রতি লক্ষ্য করে, যদি তাতে কোন নাপাকি বা ময়লা বস্তু দেখে তবে যেন পরিষ্কার করার পর তা পরে সালাত আদায় করে ।" -[আবু দাউদঃ ৬৫০; ইবনু খুজাইমাহঃ ৭৮৬; বুলুগুল মারামঃ ২১৮]

●●● মু'আবিয়াহ বিন হাকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ "অবশ্যই সালাত মানুষের কথা-বার্তা বলার ক্ষেত্র নয়, এটা তো কেবল তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠের জন্য সুনির্দিষ্ট ।" -[মুসলিমঃ ৫৩৭; বুলুগুল মারামঃ ২২০]

●●● আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত । নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ (সালাতে কম বেশি হলে ইমামের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য) পুরুষদের বেলায় তাসবীহ- সুবাহান'আল্লাহ, তবে মহিলাদের বেলায় 'তাসফীক' (এক হাতের তালু দিয়ে অন্য হাতের তালুতে মারা) । -[বুখারীঃ ১২০৩, মুসলিমঃ ৪২২, বুলুগুল মারামঃ ২২২]

●●● আবু কাতাদাহ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত । আল্লাহর রসূল (সাঃ) তাঁর মেয়ে যয়নবের গর্ভজাত কন্যা উমামাহ (রাঃ) কে কাঁধে নিয়ে সালাত আদায় করতেন । তিনি যখন সাজদাহয় যেতেন তখন তাকে রেখে দিতেন আর যখন দাঁড়াতেন তখন তুলে নিতেন । -[বুখারীঃ ৫১৬, মুসলিমঃ ৫৪৩; বুলুগুল মারামঃ ২২৬]

●●● আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ "দুটি কালো জন্তুকে সালাত আদায়ের সময়েও হত্যা করবে, (এগুলো হল) সাপ ও বিচ্ছু ।" -[আবু দাউদঃ ৯২১; নাসায়ীঃ ৩/১০; ইবনু হিব্বানঃ ২৩৫২]

●●● আবু জুহাইম বিন হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ "সালাত আদায়কারী ব্যক্তির সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করার পাপ সম্বন্ধে যদি অতিক্রমকারী জানতো তবে সে সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে ৪০ (বছর) দাঁড়িয়ে থাকাকেই তার জন্য শ্রেয় মনে করতো । -[বুখারীঃ ৫১০; মুসলিমঃ ৫০৭; বুলুগুল মারামঃ ২২৮]

●●● সাবরাহ বিন মা'বাদ আল জুহনী (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ "সালাত আদায় করার সময় সুতরা করে নেবে যদিও একখানা তীর দিয়ে তা করা হয় ।" -[হাকিমঃ ১/২৫২, মুসান্নিফ ইবনু আবু শাইবার ১/২৭৮, বুলুগুল মারামঃ ২৩০]

●●● আবু যার গিফরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ সালাত আদায় করার সময় যদি উটের পালানের শেষাংশের কাঠির পরিমাণ একটা সুতরাহ দেয়া না হয় আর উক্ত মুসল্লীর সম্মুখ দিয়ে (প্রাপ্ত বয়স্কা) স্ত্রীলোক, গাধা ও কালো কুকুর অতিক্রম করলে সালাত (এর একাগ্রতা) নষ্ট হয়ে যাবে (এটি একটি দীর্ঘ হাদীসের খণ্ডাংশ) । -[মুসলিমঃ ৫১০; বুলুগুল মারামঃ ২৩১]

●●● আবু সা'ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি লোকদের জন্য সামনে সুতরাহ রেখে সালাত আদায় করে, আর কেউ যদি এর সামনে দিয়ে যেতে চায়, তাহলে সে যেন তাকে বাঁধা দেয় । সে যদি না মানে, তবে সে ব্যক্তি যেন তার সাথে লড়াই করে, কেননা সে শয়তান । -[বুখারীঃ ৫০৯; মুসলিমঃ ৫০৫; বুলুগুল মারামঃ ২৩৪]

●●● আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত । আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কোমরে হাত রেখে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন । -[বুখারীঃ ১২১৯; মুসলিমঃ ৫৪৫; বুলুগুল মারামঃ ২৩৮]

●●● আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে সালাতে এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম । তিনি বললেনঃ এটা এক ধরণের ছিনতাই, যার মাধ্যম শয়তান বান্দার সালাত হতে অংশ বিশেষ ছিনিয়ে নেয় । -[বুখারীঃ ৭৫১; ৩২৯১; তিরমিযীঃ ৫৯০; বুলুগুল মারামঃ ২৪৩]

●●● আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত । নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে থাকে, তখন সে তার রবের সাথে নিবিড় আলাপে মশগুল থাকে । কাজেই সে যেন তার সামনে বা ডানে থুথু না ফেলে; তবে (প্রয়োজনে) বাঁ দিকে বা পায়ের নীচে ফেলবে । -[বুখারীঃ ১২১৪; মুসলিমঃ ৫৫১; বুলুগুল মারামঃ ২৪৫]

●●● আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত । আয়িশা (রাঃ) এর নিকট একটা বিচিত্র রঙের পাতলা পর্দার কাপড় ছিলো । তিনি তা ঘরের এক দিকে পর্দা হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন । নাবী (সাঃ) বললেনঃ আমার সামনে থেকে তোমার এই পর্দা সরিয়ে নাও । কারণ সালাত আদায় করার সময় এই ছবিগুলো আমার সামনে ভেসে উঠে । -[বুখারীঃ ৩৭৪; বুলুগুল মারামঃ ২৪৬]

●●● জাবির বিন সামূরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ সালাতের অবস্হায় লোকেরা যেন তাদের দৃষ্টিকে আকাশের দিকে দেয়া থেকে বিরত থাকে নতুবা তাদের চক্ষু (দৃষ্টি শক্তি) তাদের পানে ফিরে না আসতেও পারে । -[মুসলিমঃ ৪২৮; আবু দাউদঃ ৯১২]

●●● আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, খাবার উপস্হিত রেখে সালাত আদায় করা যায় না, আর প্রস্রাব পায়খানার বেগ চেপে সালাত আদায় করা যায় না । -[মুসলিমঃ ৫৬০; আবু দাউদঃ ৮৯; বুলুগুল মারামঃ ২৪৯]

●●● আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ হাইতোলা শয়তানের পক্ষ থেকে, তাই যদি কারো তা আসে সে যেন সাধ্যানুসারে তা প্রতিহত করে (তিরমিযীতে সালাতে মধ্যে কথাটি বৃদ্ধি করে বর্ণিত আছে)। -[বুখারীঃ ৩২৮৯; মুসলিমঃ ২৯৯৪; আবু দাউদঃ ৫০২৮; তিরমিযীঃ ৩৭০]

●●● আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ যখন তুমি সালাতে দাঁড়ানোর ইচ্ছে করবে, তখন প্রথমে তুমি যথানিয়মে অযু করবে । তারপর কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে । তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হবে, তা তিলাওয়াত করবে । তারপর তুমি রূকু করবে ধীরস্থীর ভাবে । তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে । তারপর সাজদাহ করবে ধীরস্থীরভাবে । তারপর আবার মাথা তুলে বসবে ধীরস্থীরভাবে । তারপর ঠিক এভাবেই তোমার সালাতের যাবতীয় কাজ সমাধা করবে । -[বুলুগুল মারামঃ ২৬৭]

●●● আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সা.) সালাত আরম্ভ করার সময় দাঁড়িয়ে তাকবীর বলতেন । অতঃপর রূকুতে যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন, আবার যখন রূকু হতে পিঠ সোজাকরে উঠতেন তখন 'সামি আল্লাহু'লিমাল হামিদা' বলতেন, অতঃপর দাঁড়িয়ে 'রাব্বানা লাকাল হামদ্' বলতেন । অতঃপর সাজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন । এবং যখন মাথা উঠাতেন তখনও তাকবীর বলতেন । আবার (দ্বিতীয়) সিজদায় যেতে তাকবীর বলতেন এবং পুনরায় মাথা উঠাতেন তখনও তাকবীর বলতেন । এভাবে তিনি পুরো সালাত শেষ করতেন । আর দ্বিতীয় রাক'আতের বৈঠক শেষে যখন(তৃতীয় রাক'আতের জন্য) দাঁড়াতেন তখনও তাকবীর বলতেন । -[বুখারী: ৭৮৯, ৭৯৫, ৮০৩; মুসলিম: ৩৯২; বুলুগুল মারামঃ ২৯৫]

●●● আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যখন সালাত শুরু করতেন, তখন উভয় হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন । আর যখন রূকুতে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রূকু হতে মাথা উঠাতেন তখনও দু'হাত উঠাতেন । -[বুখারীঃ ৭৩৫, ৭৩৬, ৭৩৮, ৭৩৯; মুসলিমঃ ৩৯০; তিরমিযীঃ ২৫৫; নাসায়ীঃ ৮৭৭, ৮৭৮; বুলুগুল মারামঃ ২৭৫]

●●● ওয়ায়িল বিন হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃ) এর সঙ্গে সালাত আদায় করেছিলাম, তিনি স্বীয় ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে সিনার উপর (স্থাপন করলেন) । -[বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, বুলুগুল মারামঃ ২৭৮]

●●● উবাদাহ ইবনু সমিত (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি সালাতে সূরা আল-ফাতিহা পড়ল না তার সালাত হলো না ।" -[দারকুৎনী, ইবনু হিব্বান, বুলুগুল মারামঃ ২৭৯]

●●● রাসূল (সাঃ) বলেন- তোমরা হয়তো ইমামের পেছনে (কুরআন) পড় । আমরা (সাহাবীরা) বললাম, হ্যাঁ পড়ি । তিনি বললেন, সূরা ফাতিহা ব্যতীত তা করবে (কুরআন পড়বে) না । কেননা, যে এটা পড়ে না তার সালাত হয় না । -[বুখারীঃ ৭৫৬; মুসলিমঃ ৩৯৪; তিরমিযীঃ ২৪৭; নাসায়ীঃ ৯১০; ৯১১]

●●● আবু হরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) যখন উম্মুল কুর'আন বা সূরা ফাতিহা পাঠ সমাপ্ত করতেন তখন তার কণ্ঠস্বর উঁচু করে আমীন বলতেন । (দারকুৎনী একে হাসান বলেছেন; হাকিম একে সহীহ বলেছেন)। -[দারকুৎনী (১/৩৩৫), হাকিম (১/২২৩), বুলুগুল মারামঃ ২৮৩]

●●● আবদুল্লাহ বিন আবু আউফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ কোন এক ব্যক্তি নাবী (সাঃ) এর নিকট এসে বলল- আমি কুরআন এর কোন অংশ গ্রহণে (মুখস্থ করতে) সক্ষম নই, তাই আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দেন যা আমার জন্য যথেষ্ট হয় । নাবী (সাঃ) বলেন, তুমি বলবে, 'সুবাহান'আল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ অলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, অলা হাওলা অলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম' । (ইবনু হিব্বান, দারকুৎনী, হাকিম এটিকে সহীহ বলেছেন) । -[আবু দাউদঃ ৮৩২; আহমাদঃ ১৮৬৩১; ইবনু হিব্বানঃ ১৮০৮; দারকুৎনীঃ ৩/৩০; হাকিমঃ ১/২৪১]

●●● আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেছেন, 'নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা কাতার মিলিয়ে সালাত আদায়কারীদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং যে মাঝের ফাঁকা বন্ধ করে আল্লাহএ কারণে তাঁর একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন ।' -[ইবনু মাজাহ হা: ৯৯৫; মুসনাদে আহমাদ: ৬/৮৯]

●●● ওয়ায়িল বিন হুজর (রা.) থেকে বর্ণিত । নাবী (সা.) রুকু করার সময় আঙ্গুলগুলো(হাঁটুর উপর) ফাঁক-ফাঁক করে রাখতেন, আর যখন সাজদাহতে যেতেন তখন তাঁর আঙ্গুলগুলোকে মিলিয়ে রাখতেন ।"-[হাকিম ১ম খন্ড ২২৪ পৃঃ, ২২৭; বুলুগুল মারামঃ ৩০০]

●●● বারআ বিন্ আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেনঃ "তুমি যখন সাজদাহকরবে তখন তোমার দু-হাতের তালু মাটিতে রাখবে ও কনুইদ্বয় উঁচু করে রাখবে ।" -[মুসলিম: ৪৯৪; নাসায়ী: ১১০৪; আবু দাউদ: ৮৯৬]

●●● ইবনু উমার (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সা.) যখন তাশাহুদে বসতেন তখন বাম হাত বাম হাটুর উপর ও ডান হাত ডান হাটুর উপর রাখতেন এবং (আরাবীয় পদ্ধতিতে) তিপ্পান্ন গণনার ন্যায় (ডান) হাতের শাহাদাত ব্যতীত আঙ্গুলগুলোকেগুটিয়ে নিতেন এবং শাহাদাত আঙ্গুলদ্বারা ইশারা করতেন ।(মুসলিমের ভিন্ন একটি রিওয়ায়াতে রয়েছ: আঙ্গুলগুলোকেভাঁজ করে নিয়ে কেবল বৃদ্ধাঙ্গুলির নিকটতম (শাহাদাত) আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন) । -[মুসলিম: ৫৮০; তিরমিযী: ২৯৪; নাসায়ী: ১১৬০]

●●● ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, নাবী (সা.) দু'সলজদার মাঝখানে (বসে বলতেন, আল্লাহুম্মাগফিরলী, ওয়ারহামনী, ওয়াহদিনী, ওয়া আফিনী, ওয়ারযুকনী । (হে প্রভু! আমায় ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন, আমাকে পথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুখী করুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন) । -[আবু দাউদ: ৮৫০; তিরমিযী: ২৮৪; ইবনু মাজাহ: ৮৯৮]

●●● আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে সাজদায় যাবে তখন যেন উটের মতো না বসে এবং সে যেন হাটুদ্বয় রাখার পূর্বে তার দু'হাত মাটিতে রাখে । (এ হাদীসটি ওয়ায়িল বিন হুজর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস থেকে শক্তিশালী) । -[আবু দাউদঃ ৮৪০, ৮৪১; নাসায়ীঃ ১০৯০, ১০৯১; বুলুগুল মারামঃ ৩১০]

●●● ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত । নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ আমি সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদাহ করার জন্য নির্দেশিত হয়েছি । কপাল দ্বারা এবং তিনি হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইশারা করে এর অন্তর্ভুক্ত করেন, আর দু'হাত, দু'হাটু এবং দু'পায়ের আঙুলসমূহ দ্বারা । -[বুখারীঃ ৮০৯, ৮১০, ৮১২; মুসলিমঃ ৪৯০; তিরমিযীঃ ২৭৩; বুলুগুল মারামঃ ]

●●● আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ ফরজ সালাত ব্যতীত নফল সালাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম সালাত হচ্ছে রাতের সালাত । -[মুসলিমঃ ১১৬৩; তিরমিযীঃ ৪৩৮, ৭৪০; বুলুগুল মারামঃ ৩৬৮]

●●● খারিজাহ বিন হুযাফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন- আল্লাহ একটি সালাত দান করে তোমাদেরকে একটি বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন, তা তোমাদের লাল রঙের উট অপেক্ষা উত্তম । আমরা বললাম- হে আল্লাহর রাসূল! সেটা কি? তিনি বললেন 'বিতর সালাত' যা পড়া হয় 'ইশা সালাতের পর থেকে ফজর উদর হবার পূর্ব পর্যন্ত । (হাকিম একে সহীহ বলেছেন) । -[আবু দাউদঃ ১৪১৮; তিরমিযীঃ ৪৫২; দারেমীঃ ১৫৭৬]

●●● আয়িশা (রাঃ) থেক বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) রাতের সকল অংশে (অর্থাৎ রাতের বিভিন্ন সময়ে) বিতর আদায় করতেন আর (জীবনের) শেষ দিকে সাহরীর সময় তিনি বিতর আদায় করতেন । -[বুখারীঃ ৯৯৬; মুসলিমঃ ৭৪৫; তিরমিযীঃ ৪৫৬]

●●● আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) বলেছেন- হে আহলুল কুরআন! তোমরা বিতর (বিজোড়) সালাত আদায় কর । কেননা আল্লাহ বিজোড় (বিতর) আর তিনি বিজোড় (বিতর) ভালোবাসেন । (ইবনু খুজাইমাহ একে সহীহ বলেছেন) । -[আবু দাউদঃ ১৪১৬; নাসায়ীঃ ১৬৭৫; তিরমিযীঃ ৪৫৩]

●●● আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) কেবল কোন সম্প্রদায়ের পক্ষে দু'আ বা বিপক্ষে বদ-দুআ (অভিসম্পাত) করার জন্য 'কুনূত, (পাঠ) করতেন । (ইবনু খুজাইমাহ একে সহীহ বলেছেন) । -[সিলসিলা সহীহা হাঃ ৬৩৯; বুলুগুল মারামঃ ৩০৬]

●●● ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি নাবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন, নাবী (সাঃ) বলেছেন- ফজর হয়ে গেলে রাতের সালাতের সময় শেষ হয়ে যায় । অতএব তোমরা ফজর উদিত হওয়ার পূর্বেই বিতর সালাত আদায় করবে । -[তিরমিযীঃ ৪৬৯; নাসায়ীঃ ১৬৬৬; আবু দাউদঃ ১২৯৫]

●●● আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত । আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ জামা'তে সালতের ফযীলত একাকী আদায়কৃত সালাত অপেক্ষা সাতাশ গুণ বেশি । -[বুখারীঃ ৬৪৫; মুসলিমঃ ৬৫০; তিরমিযীঃ ২১৫; নাসায়ীঃ ৮৩৭]

●●● আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ মুনাফিকদের জন্য ফজর ও ইশার সালাত অধিক ভারী । এ দু' সালাতের কী ফযীলত, তা যদি তারা জানতো, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হতো । -[বুখারীঃ ৬৪৪; মুসলিমঃ ৬৫১; আহমাদঃ ৭২৬০; তিরমিযীঃ ২১৭]

●●● আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, একজন অন্ধলোক (আব্দুল্লাহ বিন উম্মু মাকতুম) রাসূল (সাঃ) এর নিকট এসে বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! মসজিদে নিয়ে যাওয়ার মতো আমার কোন লোক নেই । এটা শুনে তিনি তাকে (জামা'আতে উপস্থিত হওয়া হতে) অব্যাহতি দিলেন । যখন লোকটি ফিরে গেল তখন তাকে ডেকে বললেন, তুমি কি সালাতের আজান শুনতে পাও? লোকটি বললেন, হ্যাঁ, রাসূল (সাঃ) বললেন, তবে তুমি আজানে সাড়া দাও (অর্থাৎ আজানের ডাকে জামা'তে হাজির হও) । -[মুসলিমঃ ৬৫৩; নাসায়ীঃ ৮৫০; বুলুগুল মারামঃ ৪০২]

●●● আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, "যে কোন গ্রাম বা মরু অঞ্চলে তিন জন লোক বাস করলে এবং সেখানে (জামাতে) সালাত কায়েম না করলে শয়তান তাদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করে ফেলে । সুতরাং তোমরা জামা'তবদ্ধ হও অন্যথা ছাগ পালের মধ্য হতে নেকড়ে সেই ছাগলটি ধরে খায়, যে (পাল হতে) দূরে দূরে থাকে ।" -[আবু দাউদ, নাসায়ী, রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ১০৭৭]

●●● ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি রাসূল (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ আযান শুনার পরও যে (জামা'তে) হাজির হয় না, তার সালাত (শুদ্ধ) হয় না । তবে যদি ওযর (শরীয়ত সম্মত কোন কারণ) থাকে তাহলে তা স্বতন্ত্র ব্যপার হবে । -[আবু দাউদঃ ৫৫১; ইবনু মাজাহঃ ৭৯৩; দারেমীঃ ৪২০; বুলুগুল মারামঃ ৪০৩]

●●● আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকাল অথবা সন্ধায় মসজিদে যায়, তার জন্য আল্লাহ মেহমানের উপকরণ প্রস্তুত করেন। যখনই সে সেখানে যায়, তখনই তার জন্য ঐ মেহমানের উপকরণ প্রস্তুত করা হয়।” -[সহীহুল বুখারী ৬৬২ ও মুসলিম ৪৬৭,৬৬৯]

●●● ইয়াযিদ বিন আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করেছিলেন, যখন তিনি সালাত সমাধান করলেন তখন দেখলেন যে, দুটি লোক (জামা'আতে) সালাত আদায় করে নাই । তাদেরকে তিনি ডাকলেন । ফলে ঐ দু'জনকে যখন তাঁর নিকট নিয়ে আসা হল তাদের বাহুদ্বয়ের মাংসপেশী (ভয়ে) কাঁপছিল । তারপর তিনি বললেন, আমাদের সাথে জামা'তে সালাত আদায় করতে কিসে বাধা দিল? তারা বলল আমরা বাড়িতে সালাত সমাধান করেছিলাম । তিনি তাদের বললেন, এরূপ করবে না । যখন তোমরা বাড়িতে সালাত আদায় করার পর ইমামকে সালাত সমাধা করার পূর্বেই পাবে তখন তোমরা তার সঙ্গেও সালাত আদায় করবে । এ সালাত তোমার জন্য নফল বলে গণ্য হবে । -[তিরমিযীঃ ২১৯; আবু দাউদঃ ৫৭৫; আহমাদঃ ১৭০২০]

●●● আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, "রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে আমি দু' রাকাত যোহরের (ফরযের) আগে, দু'রাকাত তার পরে এবং দু'রাকাত জুম'আর পরে, দু'রাকাত মাগরিব বাদ, আর দু'রাকাত সালাত এশার (ফরযের) পরে পড়েছি ।" -[বুখারী, মুসলিম, রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ১১০৫]

●●● আয়িশা রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) যোহরের (ফরয সালাতের) পূর্বে চার রাকাত ও ফজরের আগে দু'রাকাত সালাত কখনো ত্যাগ করতেন না । -[বুখারী, রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ১১০৭]

●●● আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "ফজরের দু'রাকাত (সুন্নাত) পৃথিবী ও তাতে যা কিছু আছে সবার চেয়ে উত্তম ।" -[মুসলিম, রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ১১০৯]

●●● উম্মে হাবীবাহ রামলা বিনতে আবু সূফিয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, "যে কোন মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর (সন্তুষ্টি অর্জনের) জন্য প্রত্যহ ফরয সালাত ছাড়া বারো রাকাত সুন্নাত সালাত পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি গৃহ নির্মাণ করবেন ।" -[মুসলিম, তিরমিযী, নাসায়ী, রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ১১০৪]

●●● আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত । আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে, তখন যেন সে সংক্ষেপ করে । কেননা, তাদের মধ্যে ছোট, বড়, দুর্বল, কর্মব্যাস্তরা রয়েছে । আর যদি কেউ একাকী সালাত আদায় করে, তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে । -[বুখারীঃ ৭০৩; মুসলিমঃ ৪৬৭; তিরমিযীঃ ২৩৬]

●●● ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক কুরআন আয়ত্তকারী ব্যক্তি তোমাদের সালাতের ইমামতি করবে । যদি তাদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি কুরআন পাঠে সমতুল্য হয় তবে যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত অধিক জানে (সে ইমামতি করবে); সুন্নাত সমতুল্য হলে যে হিজরতে অগ্রগামী, হিজরতে সমতুল্য হলে যে ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী, (সে ইমামতি করবে) । কেউ যেন কোন ব্যক্তির অধিকার স্থলে তার অনুমতি ব্যতীত ইমামতি না করে ও তার (কোন ব্যক্তির ) বিছানায় তাঁর অনুমতি ব্যতীত না বসে । -[মুসলিমঃ ৬৭৩; তিরমিযীঃ ২৩৫; নাসায়ীঃ ৭৮০; বুলুগুল মারামঃ ৪১২]

●●● আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ পুরুষদের উত্তম সারি (কাতার) হলো প্রথম সারি, আর নিকৃষ্ট সারি হচ্ছে পিছনের সারি এবং মেয়েদের সর্বোত্তম কাতার শেষেরটি আর নিকৃষ্ট হচ্ছে প্রথমটি । -[মুসলিমঃ ৪৫৬; তিরমিযীঃ ২২৪; নাসায়ীঃ ৮২০]

●●● আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, যখন তোমরা ইক্বামত শুনতে পাবে, তখন সালাতের দিকে চলে আসবে, তোমাদের উচিত স্থিরতা ও গম্ভীর্যতা অবলম্বন করা । তাড়াহুড়া করবে না । ইমামের সাথে যতটুকু পাও তা আদায় করবে, আর যা ছুটে যায় তা পূর্ণ করবে । -[বুখারীঃ ৬৩৬; মুসলিমঃ ৬০২; তিরমিযীঃ ৩২৭; বুলুগুল মারামঃ ৪২২]

●●● উবাই বিন কা'ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ একা একা সালাত আদায়ের চেয়ে অপর এক ব্যক্তির সাথে সালাত আদায় উত্তম । আর দু'জনের সঙ্গে জামা'ত করে সালাত আদায় করা একাকী সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম । তারপর যত অধিক (জামা'আত বড়) হবে মহা পরাক্রমশীল আল্লাহর নিকট তা প্রিয় । (ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন) । -[আবু দাউদঃ ৫৯৫; আহমাদঃ ১১৯৪৫; বুলুগুল মারামঃ ৪২৩]

●●● উম্মু ওয়ারাকাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূল (সাঃ) তাকে (ওয়ারাকার মাতাকে) হুকুম করেছিলেন যে, সে তা মহল্লাবাসীনীর ইমামতি করবে । (ইবনু খুজাইমাহ একে সহীহ বলেছেন) । -[ইবনু খুজাইমাহঃ ১৬৭৬; আবু দাউদঃ ৫৯১; বুলুগুল মারামঃ ৪২৪]

●●● আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন তিন মাইল অথবা তিন ফারসাখ দূরবর্তী স্থানে যেতেন তখন তিনি দু' রাকাত সালাত আদায় করতেন (অর্থাৎ সালাত কসর করতেন) । -[মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ, বুলুগুল মারামঃ ৪৩৩]

●●● আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে মদীনা হতে মক্কার দিকে বের হয়েছিলাম । রাসূল (সাঃ) মদীনা ফিরে আসা (নির্ধারিত সময় অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া) পর্যন্ত দু' রাকাত, দু রাকাত সালাত আদায় করেছে । -[বুখারী, মুসলিম, বুলুগুল মারামঃ ৪৩৪]

●●● ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) একদা সফরে উনিশ দিন পর্যন্ত অবস্থান কালে সালাত কসর করেছেন । (অন্য শব্দে মক্কায় উনিশ দিন, আবু দাউদের বর্ণনায় আছে সতের দিন, অপর বর্ণনায় আছে পনের দিন) । -[বুখারী, তিরমিযী, আবু দাউদ, বুলুগুল মারামঃ ৪৩৫]

●●● মু'আয (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমরা রাসূল (সাঃ) এর সঙ্গে তাবুক যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হলাম । তিনি ঐ সফরে যুহর ও আসর একত্রে এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে পড়াতে থাকেন । -[মুসলিমঃ ৭০৬; তিরমিযীঃ ৫৫৩; বুলুগুল মারামঃ ৪৩৯]

●●● আব্দুল্লাহ বিন উমার ও আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তাঁরা রাসূল (সাঃ) কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছেন যে, জুম'আ বর্জনের পাপ হতে লোক অবশ্য বিরত হোক, নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরসমূহে মোহর মেরে দিবেন, এরপর তারা গাফিল (ধর্মবিমুখ) হয়ে যাবে । -[মুসলিমঃ ৮৬৫; নাসায়ীঃ ১৩৭০; আহমাদঃ ২১৩৩; বুলুগুল মারামঃ ৪৪৫]

●●● জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, এক জুম'আর দিনে নাবী (সাঃ) খুতবাহ দেয়ার সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সালাত আদায় করেছ কি? সে বলল, না । তিনি বললেন, উঠ, দু' রাকাত সালাত আদায় কর । -[বুখারীঃ ৯৩০; ৯৩১; মুসলিমঃ ৫৬৫; তিরমিযীঃ ৫১০; বুলুগুল মারামঃ ৪৫৬]

●●● আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি গোসল করে, অতঃপর জুম'আর সালাতে হাজির হয় আর তার জন্য যতটা নির্দিষ্ট (বিধিবদ্ধ) থাকে ততোটা সুন্নাত সালাত আদায় করে । তারপর খুতবাহ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নীরব থাকে । তারপর ইমাম সাহেবের সাথে সালাত আদায় করে, তাকে এক জুম'আ হতে অন্য জুম'আ পর্যন্ত কৃত গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হয়- এর অতিরিক্ত আরো তিন দিন (এর গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়) । -[মুসলিমঃ ৮৫৭; তিরমিযীঃ ৪৯৮; আবু দাউদঃ ১০৫০; বুলুগুল মারামঃ ৪৬২]

●●●আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত । আল্লাহর রাসূল (সাঃ) জুম'আর দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিন এমন একটি মূহর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মূহর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত । (মুসলিমের অন্য রিওয়াতে রয়েছেঃ নাবী (সাঃ) বলেন, এটা অতি স্বল্প সময় মাত্র) । -[মুসলিমঃ ৮৪২; তিরমিযীঃ ৪৯১]

●●● হাকাম বিন হাযন (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃ) এর সঙ্গে জুম'আর সালাতে উপস্থিত হলাম । তিনি লাঠি বা ধনুকের উপর ভর দিয়ে (খুতবাহতে) দাঁড়ালেন । -[আবু দাউদঃ ১০৯৬; আহমাদঃ ১৭৪০০; বুলুগুল মারামঃ ৪৭৪]

Post a Comment