রাসূলুল্লাহ (সা:) কে হত্যার ষড়যন্ত্র


মুশরিকগণ শেষ পর্যন্ত পর্যবসিত হল অকৃতকার্যতায় এবং হাবশায় হিজরতকারী মুহাজিরদের ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হলো। তখন তারা আক্রোশে ফেটে পড়লো। ফলে অবশিষ্ট মুসলিমদের উপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিলো। এমনকি তারা রাসূলুল্লাহ (সা:) এর উপরও তাদের নির্যাতনের হাত প্রসারিত করে দিলো। তাছাড়া কর্মকৌশল হিসেবে তারা এটাও স্থির করলো যে, এদের (মুসলিমদের) বিরুদ্ধে সাফল্য লাভ করতে হলে হয় বল প্রয়োগ করে মুহাম্মদ (সা:) এর প্রচারাভিজান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হবে আর না হয় তাঁর অস্তিত্ব ধরাপৃষ্ঠ থেকে একদম নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে হবে।

এমন পরিস্থিতিতে অল্পসংখ্যক মুসলিম মক্কায় অবস্থান করেছিলেন যারা ছিলেন অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদার পাত্র অথবা কারো আশ্রিত। এসত্ত্বেও তারা উদ্যত মুশরিকদের থেকে গোপনে ইবাদাত বন্দেগী করতেন। তবুও তারা মুশরিকদের অত্যাচার নির্যাতন থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিলেন না। অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ (সা:) প্রকাশ্যভাবে মুশরিকদের সম্মুখে সালাত ও ইবাদাত করতেন এবং সংগোপনে আল্লাহর নিকট দু'আ করতেন।

রাসূলুল্লাহ (সা:) এর উপর মুশরিকদের অত্যাচারের কিছু নমুনা তুলে ধরা হলো:

১. একদা আবু লাহাবের পুত্র উতায়বা রাসূলুল্লাহ (সা:) কে কষ্ট দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগে গেল। সে জামা ছিঁড়ে নষ্ট করে ফেলল এবং তাঁর পাক মুখে থুথু নিক্ষেপ করল। আল্লাহর রহমতে থুথু সে পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে নাই । সেই অবস্থায় রাসূল (সা:) আল্লাহর সমীপে দু'আ করলেন, "হে আল্লাহ্! তোমার কুকুরগুলোর মধ্য থেকে তার জন্য একটি নিযুক্ত করে দাও।" নবী কারীম (সা:) এর এই দু'আ আল্লাহর সমীপে কবুল হলো এবং এভাবে তা প্রমাণিত হয়ে গেল- 'একদিন কিছু সংখ্যক কুরাইশ লোকজনের সঙ্গে উতায়বা বিদেশ গেল । যখন তারা শামরাজ্যের জারাকা নামক স্থানে শিবিরস্থাপন করল, তখন রাতের বেলায় একটা বাঘ এসে তাদের চারপাশে ঘোরাফেরা করতে থাকল। ওকে দেখেই উতায়বা ভীতি বিহ্বল কণ্ঠে বলে উঠলো, হায়! হায়! আমার ধ্বংস! আল্লাহর শপথ, সে আমাকে খেয়ে ফেলবে। এ মর্মেই মুহাম্মদ (সা:) আমার ধ্বংসের জন্য আল্লাহর নিকট দু'আ করেছিলেন। অতঃপর গভীর রাতে বাঘ এসে সকলকে পাশ কাটিয়ে সোজা উতায়বার নিকট যায় এবং তার মাথাটা শরীর হতে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যায় । (মুখতাসারুস সীরাহ)

২. একদা উক্ববা বিন আবী মু'আইত্ব রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন সিজদারত ছিলেন তখন তাঁর ঘাড় এত জোরে পদতলে পিষ্ট করল যে মনে হল তাঁর অক্ষিগোলক দুটি তখনই অক্ষিপট থেকে বেড়িয়ে আসবে । (প্রাগুক্ত)

৩. উরওয়া বিন জুবাইর (রা:) হতে বর্ণিত এক বিবরণ থেকে জানা যায়, তিনি বলেছেন যে, আমি আব্দুল্লাহ বিন আসকে নবী (সা:) এর উপর মুশরিকগণ সবচেয়ে কঠিন যে নিপীড়ন চালিয়েছিলো তা বর্ণনা করার জন্য প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন যে, একদা নবী (সা:) কাবাহ গৃহের হাতীমে সালাত পড়ছিলেন এমন সময় উক্ববা বিন মু'আইত্ব সেখানে আগমন করলেন। তিনি সেখানে উপস্থিত হয়েই নিজ কাপড় দ্বারা তাঁর গ্রীবা ধারণ করে অত্যন্ত জোরে চপেটাঘাত করলেন এবং গলা টিপে ধরলেন। এমন সময় আবু বকর (রা:) সেখানে উপস্থিত হলেন এবং উক্ববার দু'কাধ ধরে জোরে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলেন এবং বললেন, 'তোমরা লোকটাকে এ জন্যই হত্যা করছো যে, তিনি বলেছেন যে, আমার প্রভু আল্লাহ্।' (সহীহুল বুখারী)

আব্দুল্লাহ বিন আস বলেছেন যে, এটাই ছিলো সবচেয়ে কঠিন অত্যাচার ও উৎপীড়ন, যা আমি কুরাইশগণকে করতে দেখেছি। (ইবনে হিশাম)


তথ্যসূত্র: আর-রাহীকুল মাখতুম, ১৩৩-১৩৬ পৃ:

Post a Comment