রাসূলুল্লাহ (সা:) এর প্রতি আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর শত্রুতা


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াতের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ার পর থেকে তার সম্মান-মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ করতে থাকলো এবং তাদের কাছে বিষয়টা খুব কঠিন হয়ে গেল যে তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো । তারা রাসূলুল্লাহ (সা:) এর সাথে শত্রুতার হাতকে প্রশস্ত করে দিলো । ফলে তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ, উপহাস, সংশয়-সন্দেহ, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ইত্যাদি যাবতীয় প্রকার দুর্ব্যবহার বাড়িয়ে দিলো ।

প্রকৃতপক্ষে প্রথম থেকেই রাসূলুল্লাহ (সা:) এর প্রতি আবু লাহাবের দৃষ্টিভঙ্গী ছিলো অত্যন্ত কঠোর ও কঠিন । সে ছিলো বনু হাশিমের অন্যতম নেতা । সে অন্যদের চেয়ে রাসূলুল্লাহ (সা:) এর ব্যাপারে বেশি ভীত ছিলো । সে ও তার স্ত্রী ছিলো ইসলামের গোড়ার শত্রু । এমনকি অন্যান্য কুরাইশগণ যখন ঘুণাক্ষরেও নবী কারীম (সা:) কে নির্যাতন করার কথা চিন্তা করে নি, তখনো আবু লাহাবের আচরণ ছিলো অত্যন্ত মারমুখী ।

কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, সাফা পর্বতের উপর নবী কারীম (সা:) কে আঘাত করার জন্য আবু লাহাব একখন্ড পাথর হাতে উঠিয়েছিলেন ।

রাসূলুল্লাহ (সা:) এর উপর আবু লাহাব যে পৈশাচিকতা ও নিষ্ঠুরতা অবলম্বন করেছিলেন তার আরও বিভিন্ন প্রমাণ রয়েছে । তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আবু লাহাবের ছেলে ও রাসূলুল্লাহ (সা:) এর মেয়ের মধ্যকার বিবাহ সম্পর্কচ্ছেদ করা । নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সা:) এর দু'মেয়ের সঙ্গে আবু লাহাব তাঁর দু'ছেলের বিবাহ দিয়েছিলেন । কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা:) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর আবু লাহাব অত্যন্ত নিষ্ঠুরতা ও নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁর দু'ছেলেরই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেন ।

আবু লাহাবের পাশবিকতার আরও একটি ঘটনা হচ্ছে নাবী কারীম (সা:) এর পুত্র আব্দুল্লাহ যখন মারা যান তখন তিনি (আবু লাহব) উল্লাসে ফেটে পড়েন, টগবগিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে তার বন্ধু-বান্ধবদের নিকট এ দুঃসংবাদকে শুভ সংবাদরুপে পরিবেশন করেন যে, 'মুহাম্মদ (সা:) এর লেজকাটা (পুত্রহীন) হয়েছে' ।

তারিক বিন আব্দুল্লাহ মুহারিবীর বর্ণনায় জানা যায় যে, এ ব্যক্তি নাবী কারীম (সা:) কে শুধু মিথ্যা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে ক্ষান্ত হননি, বরং কোন কোন সময় তিনি নাবী (সা:) কে লক্ষ্য করে প্রস্তর নিক্ষেপ করতেন, যার ফলে তাঁর পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত রক্তাক্ত হয়ে যেত ।

আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামীল (যার নাম আরওয়া) ছিলেন হারব বিন উমাইয়ার কণ্যা, আবু সুফিয়্যানের বোন । নাবী (সা:) এর প্রতি অত্যাচারে তিনি ছিলেন স্বামীর যোগ্য অংশধারিণী । তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিদ্বেষপরায়ণ ও প্রতিহিংসাপরায়ণ মহিলা । তিনি রাসূলুল্লাহ (সা:) এর চলার পথে ও দরজায় কাঁটা ছড়িয়ে কিংবা পুঁতে রাখতেন ।

তাছাড়া মুসলিমদের বিরুদ্ধে নানাবিধ ফিৎনা ফাসাদের আগুন জ্বালিয়ে দেয়া এবং উস্কানী দিয়ে ভয়াবহ যুদ্ধের বিভীষিকা সৃষ্টি করা তাঁর অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য । এ জন্যই কুরআনে তাঁকে 'খড়ির বোঝা বহনকারী' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে ।


তথ্যসূত্র: আর-রাহীকুল মাখতুম

Post a Comment