নাবী (সা:) এর প্রতি কুরাইশ নেতাদের বিরুদ্ধচারণ


ইবনে ইসহাক্বের বর্ণনায় রয়েছে যে, যে সকল লোকজনেরা নাবী কারীম (সা:) কে তাঁর বাড়িতে জ্বালা-যন্ত্রণা দিতেন তাদের নেতৃত্ব দিতেন আবু লাহাব, হাকাম বিন আবিল আস বিন উমাইয়া, উক্ববা বিন আবী মু'আইত্ব, আদী বিন হামরা সাক্বাফী, ইবনুল আসদা হুযালী; এরা সকলেই ছিলেন তাঁর প্রতিবেশী। এঁদের মধ্যে হাকাম বিন আবিল আস ব্যতীত কেউ ইসলাম গ্রহণ করেন নাই।

রাসূল (সা:) এর উপর তাদের জুলুম নির্যাতনের ধারা ছিলো এরুপ, তিনি যখন সালাতে রত হতেন তখন ছাগলের নাড়ি ভূঁড়ি এমনভাবে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হতো যে, তা গিয়ে পড়ত তাঁর উপর। উনুনের উপর হাঁড়ি পাতিল চাপিয়ে রান্নাবান্না করার সময় এমনভাবে আবর্জনাদি নিক্ষেপ করা হতো যে, তা গিয়ে পড়তো হাড়ি পাতিলের উপর।

যখন তাঁর উপর এ সকল আবর্জনা নিক্ষেপ করা হতো তখন সেগুলো নিয়ে বেরিয়ে দরজায় খাড়া হতেন এবং তাদের ডাক দিয়ে বলতেন, 'ওহে আবদে মানাফ! প্রতিবেশীর সঙ্গে প্রতিবেশীর এ কেমন আচরণ!' তারপর আবর্জনা স্তূপে নিক্ষেপ করে আসতেন।

উক্ববা বিন আবী মু'আইত্ব আরও দুষ্ট প্রকৃতির এবং হিংসাপরায়ণ ছিলেন। সহীহুল বুখারীতে আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রা:) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা নবী কারীম (সা:) বায়তুল্লাহর পাশে সালাত আদায় করছিলেন, এমতাবস্থায় আবূ জাহল এবং তাঁর বন্ধুবর্গ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এঁদের মধ্যে কোন এক ব্যক্তি অন্যদের লক্ষ্য করে বললেন, 'কে এমন আছে যে, অমুকের বাড়ি থেকে উটের ভূঁড়ি আনবে এবং মুহাম্মদ যখন সালাত রত অবস্থায় সিজদায় যাবে তখন তার পিঠের উপর ভূঁড়িটি চাপিয়ে দিবে । ঐ সময় আরব বাসীগণের মধ্যে নিকৃষ্টতম ব্যক্তি উক্ববা বিন আবী মু'আইত্ব উঠল এবং ভূঁড়িটি নিয়ে এসে অপেক্ষা করতে থাকলো। যখন ননবী কারীম (সা:) সিজদায় গেলেন তখন সেই ভূঁড়িটি নিয়ে গিয়ে তার পিঠের উপর চাপিয়ে দিলো। আমি সবকিছুই দেখছিলাম, কিন্তু কোন কিছু করার ক্ষমতা আমার ছিলো না। হায় যদি আমার মধ্যে তাঁকে বাঁচানোর কোন ক্ষমতা থাকতো।

আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ আরও বলেন, এর পর তারা দানবীয় আনন্দ ও উত্তেজনায় পরস্পর পরস্পরের গায়ে ঢলাঢলি, পাড়াপাড়ি করে মাতামাতি শুরু করে দিল। মনে করলো এর চেয়ে বড় আনন্দের ব্যপার আর কিছু হতে পারে না। হায় আফসোস! যদি তারা একটু বুঝত যে, কী সর্বনাশ পথ তারা বেছে নিয়েছে।

নাবী তনয়া ফাত্বিমাহ্ (রা:) এ দুঃসংবাদপ্রাপ্ত হয়ে দ্রুত সেখানে আগমন করেন এবং ভূঁড়ি সরিয়ে পিতাকে তার নীচ থেকে উদ্ধার করেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা:) শির উত্তোলন করে বললেন: 'হে আল্লাহ্! এ কুরাইশদিগকে পাকড়াও কর'।

তথ্যসূত্র: আর-রাহীকুল মাখতুম


Post a Comment