জিহাদ বিষয়ক হাদীস


●●● আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জিহাদ না করে বা জিহাদের কামনা পোষণ না করে মারা যায় সে মুনাফিক্বী বা কপটতা অংশ বিশেষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মারা যাবে। -[মুসলিমঃ ১৯১০; নাসায়ীঃ ৩০৯৭; আবু দাউদঃ ২৫০২]


●●● আনাস (রা) হতে বর্ণিত, নাবী (সা) বলেছেনঃ তোমাদের মাল, জান ও কথার দ্বারা মুশরিকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাতে থাকবে। -[নাসায়ীঃ ৩১৯২; আবু দাউদঃ ২৫০৪]


●●● আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে জিহাদ করার অনুমতি চাইলাম। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাঃ) বললেনঃ তোমাদের জিহাদ হচ্ছে হজ্জ্ব। অপর একটি বর্ণনায় রয়েছে, নাবী (সা) কে তাঁর স্ত্রীগণ জিহাদ সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন- তখন তিনি বললেনঃ (তোমাদের জন্য) হজ্জ্বই হচ্ছে জিহাদ। -[বুখারীঃ ১৫২০, ২৮৭৫; মুসলিমঃ ১৯৬০]


●●● আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সা) এর নিকট জিহাদে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করল। তখন তিনি বললেন, তোমার পিতামাতা জীবিত আছে কি ? সে বলল, হ্যাঁ। নাবী (সা) বললেন, তবে তাঁদের খিদমতের চেষ্টা কর। -[বুখারীঃ ৫৯৭২; মুসলিমঃ ১৯৬০]


●●● জারীর (রা) হতে বর্ণিত; তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আমি ঐসব মুসলিমের উপর অসন্তুষ্ট ও রূষ্ট যারা মুশরিকদের মধ্যে (তাদের হয়ে) অবস্থান করে। -[আবু দাউদঃ ২৬৪৫; তিরমিযীঃ ১৬০৪]


●●● ইবনু আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরতের প্রয়োজন নেই । এখন কেবল জিহাদ ও নিয়্যাত (জিহাদের জন্য মানসিক প্রস্তুতি) রয়েছে । (বুখারী, মুসলিমে আরো রয়েছে যখনই তোমাদের বের হবার আহ্বান জানানো হবে তখনই তোমরা বেড়িয়ে পড়বে)। -[বুখারীঃ ১৩৪৯, ১৫৮৭, ১৮৩৩; মুসলিমঃ ১৩৫৩; তিরমিযীঃ ১৫৯০]


●●● আবু মূসা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা সুউচ্চ রাখার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করল, সে-ই আল্লাহর পথে জিহাদ করল। -[বুখারীঃ ১২৩, ৩১২৬; মুসলিমঃ ১৯০৪; ইবনু মাজাহঃ ২৭৮৩; তিরমিযীঃ ১৬৪৬]


●●● আব্দুল্লাহ ইবনু সা'দ (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ হিজরত বন্ধ হবে না যতক্ষণ শত্রুর সাথে সংগ্রাম চলতে থাকবে । -[নাসায়ীঃ ৪১৭২; আহমাদঃ ২১৮১৯; বুলুগুল মারামঃ ১২৬৭]

[আব্দুল্লাহ বিন সা'দী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে একটি প্রতিনিধিদলের সাথে গেলাম। আমাদের প্রত্যেকই কোন প্রয়োজন চাচ্ছিল। আর আমি রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে সর্বশেষ প্রবেশ করলাম। তিনি বললেন, তোমার কি প্রয়োজন ? আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সা), নিশ্চয় আমি আমার পরিবারকে ছেড়ে চলে এসেছি। আর তারা বলে যে হিজরত নাকি শেষ হয়ে গেছে । অতঃপর তিনি হাদীসটি উল্লেখ করলেন।]


●●● নাফি (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) বনী মুস্তালিক গোত্রের উপর হঠাৎ (শত্রুপক্ষকে কোন প্রকার ঘোষণা ছাড়া) আক্রমণ করেছিলেন। তখন ঐ গোত্রের লোকেরা উদাসীন ছিলো। তাদের যুদ্ধরতদের হত্যা করলেন ও সন্তানদেরকে বন্দী করলেন । নাফি (রা) বলেছেন এ সংবাদ আমাকে বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা) বলেছেন। -[বুখারীঃ ২৫৪১; মুসলিমঃ ১৭৩০; আবু দাউদঃ ২৬৩৩]


●●● সুলাইমান ইবনু বুরাইদাহ (রা) হতে বর্ণিত; তিনি তার পিতা বুরাইদাহ (রা) হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) যখন কোন ছোট বা বড় সৈন্যদলের জন্য কাউকে নেতা নির্বাচন করে দিতেন তখন বিশেষভাবে তাকে আল্লাহকে ভয় করার, মুজাহিদ মুসলিমদের সাথে কল্যাণ করার জন্য উপদেশ দিতেন। তারপর বলতেন, আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর, যে আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে তার সাথে যুদ্ধ কর, যুদ্ধ করবে, গণিমতের মালে খিয়ানত করবে না, প্রতারণা করবে না, অঙ্গহানী করবে না, বালকদের হত্যা করবে না, যখন তুমি মুশরিক শত্রুদের সাথে মুকাবিলা করবে তখন তাদেরকে তিনটি বিষয়ে দা'ওয়াত দিবে, তার যে কোন একটি ক্ববুল করে নিলে তুমি তা মেনে নিবে এবং তাদের উপর হাত উঠাবে না।

(১) তাদেরকে ইসলাম ক্ববুল করার দাওয়াত দিবে। যদি তারা তা ক্ববুল করে তুমি তাদের এ স্বীকৃতি মেনে নিবেে। তারপর তাদেরকে মুহাজিরদের কাছে হিজরত করে আসার জন্য দাওয়াত দিবে, তারা সাধারণ গ্রাম্য মুসলিমদের সমশ্রেণীভুক্ত হয়ে থাকবে আর গণিমত ও ফাই (বিনা যুদ্ধে শত্রুপক্ষের যে মাল হস্তগত হয়) এর মালে তাদের জন্য কোন অংশ হবে না, তবে যদি তারা মুসলিমদের সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করে (মাত্র তখন পাবে)।

(২) যদি তারা ইসলাম ক্ববুল করতে রাজি না হয় তবে তাদের কাছে জিযইয়া (এক প্রকার ট্যাক্স) দাবি করবে । যদি তারা স্বীকার করে তবে তাদের এ স্বীকৃতি মেনে নিবে (আর তাদের দিকে আক্রমণের হাত বাড়াবে না)। আর যদি তারা জিযইয়া কর দিতে অস্বীকার করে তবে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবে ও তাদের সাথে যুদ্ধ করবে।

(৩) আর যখন কোন দুর্গবাসীদের অবরোধ করবে তখন যদি তারা আল্লাহ ও তার রাসূলের জিম্মায় আসার কোন প্রস্তাব তোমার কাছে পেশ করে, তবে তুমি তা স্বীকার করবে না। বরং তুমি তোমার নিজের জিম্মায় তাদের নিতে পারবে । কেননা তোমাদের জিম্মা নষ্ট করা অনেক সহজ ব্যাপার, আল্লাহর জিম্মাকে নষ্ট করার চেয়ে।


আর যদি তারা আল্লাহর ফয়সালায় উপনীত হওয়ার প্রস্তাব দেয় তবে তুমি তা করবে না । বরং তুমি নিজের ফয়সালার অধীনে তাদেরকে আশ্রয় দিবে। কেননা তুমি অবগত নও যে, তুমি আল্লাহর ফয়সালা তাদের উপর সঠিকভাবে করতে পারবে কি, পারবে না। -[মুসলিমঃ ১৭৩১; তিরমিযীঃ ১৪০৮; আবু দাউদঃ ২৬১২; বুলুগুল মারামঃ ১২৬৯]


●●● মু'আয ইবনু জাবাল (রা) হতে বর্ণিত; তিনি বলেনঃ নাবী (সা) আমাকে ইয়ামান পাঠিয়েছিলেন । আর প্রত্যেক বয়ঃপ্রাপ্ত জীম্মী প্রজার মাথাপিছু (বার্ষিক) কর একটি দিনার বা তার সমমূল্যের মু'আফিরী কাপড় (ইয়ামানের তৈরীকৃত পোশাক) আদায়ের আদেশ দিয়েছিলেন। -[আবু দাউদঃ ৩০৩৮, ১৫৭৬; তিরমিযীঃ ৬২৩]


●●● আব্দুল্লাহ ইবনু কা'ব ইবনু মালিক (রা) হতে বর্ণিত । নাবী (সা) যখনই কোথাও যুদ্ধে যাবার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি অন্য দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে (কৌশলে) গোপন রাখতেন। -[বুখারীঃ ২৫৭৮, ২৯৪৮; মুসলিমঃ ২৭৬৯; তিরমিযীঃ ৩১০২]


●●● মা'কিল (রা) হতে বর্ণিত; নু'মান ইবনু মুক্বারিন (রা) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে দেখেছি তখন যিনি দিনের প্রথমাংশে যুদ্ধ না করতেন তখন সূর্য পশ্চিমাকাশে যাওয়ার পরে (স্নিগ্ধ) হাওয়া চললে এবং আল্লাহর সাহায্য অবতরণ হলে যুদ্ধ করতেন।(হাদীসটির মূল বুখারীতে রয়েছে) -[বুখারীঃ ৭৫০০; তিরমিযীঃ ১৬১২]


●●● ইবনু উমার (রা) হতে বর্ণিত; নাবী (সা) কোন একটি স্ত্রীলোককে তার কোন যুদ্ধে নিহত দেখে মেয়েদের ও বালকদের নিহত হওয়াতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। (বুখারী, মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় রয়েছে তিনি (সা) মহিলা ও বাচ্চাদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন)। -[বুখারীঃ ৩০১৪, মুসলিমঃ ১৭৪৪; তিরমিযীঃ ১৫৬৯]


●●● সা'ব ইবনু জাসসামাহ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মুসলিমদের রাত্রিকালীন আক্রমণে মুশরিকদের মহিলা ও শিশুরা নিহত হয়, তবে কী হবে ? আল্লাহর রাসূল (সা) জবাবে বলেন, তারাও তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। - [বুখারীঃ ৩০১২; মুসলিমঃ ৭৫৪৫; তিরমিযীঃ ১৫১৭; ইবনু মাজাহঃ ২৮৩৯]


●●● আয়িশা (রা) হতে বর্ণিত, এক (মুশরিক) লোক বদরের যুদ্ধের দিন নাবী (সা) এর সাথে যাচ্ছিল, তিনি ঐ লোকটাকে বলেনঃ তুমি ফিরে যাও, আমি কখনো (যুদ্ধে) মুশরিকের সাহায্য নেব না। -[মুসলিমঃ ১৮১৭; তিরমিযীঃ ১৫৫৮; আবু দাউদঃ ২৭৩২]


●●● আবু আইয়ুব আনসারী (রা) হতে বর্ণিত; তিনি বলেনঃ ওয়ালা তুলুক.... (আয়াতটির অর্থ, তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না) আয়াতটি আনসার সম্প্রদায় প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে। আয়াতটি ঐসব মুসলিমদের মনোভাবের প্রতিবাদে অবতীর্ণ হয়েছিল যারা রোমক সৈন্যের উপর আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুসৈন্যের মধ্যে প্রবেশকারী মুজাহিদদের কাজকে অনুচিত কাজ বলে মন্তব্য করেছিলেন। (অর্থাৎ কুরআনের উপরোক্ত আয়াতে যুদ্ধে মুসলিমদের উৎসাহী ও নির্ভিক হওয়ার জন্য জোড় তাগিদ করা হয়েছে এবং ধর্মীয় সংগ্রামকে ধ্বংসের কারণ মনে করার ঘোর প্রতিবাদ করা হয়েছে) এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে ঘরে বসে থাকাকে ধ্বংসের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। -[আব দাউদঃ ২৫১২; তিরমিযীঃ ২৯৭২, বুলুগুল মারামঃ ১২৭৭]


●●● উমার (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনূ নাযীরের সম্পদ আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসূল (সা) কে ফায় হিসেবে দান করেছিলেন । এতে মুসলিমগণ অশ্ব বা সাওয়ারী চালনা করেনি। এ কারণে নাবী (সা) এর জন্য নির্দিষ্ট ছিলো। এ সম্পদ থেকে নাবী (সা) তার পরিবারকে এক বছরের খরচ দিয়ে দিতেন এবং বাকী সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের প্রস্তুতির জন্য হাতিয়ার ও ঘোড়া ইত্যাদিতে ব্যয় করতেন। -[বুখারীঃ ৩০৯৪, ৪০৩৪; মুসলিমঃ ১৭৫৭; তিরমিযীঃ ১৭১৯]


●●● উমার (রা) হতে বর্ণিত; তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছেনঃ অবশ্যই ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকে আরবের মাটি হতে বের করে দেব, আর কেবল মুসলিমদেরকেই এখানে রেখে দেব। -[মুসলিমঃ ১৭৬৭; তিরমিযীঃ ১৬০৬]


●●● আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) হতে বর্ণিত। নাবী (সা) বলেন, যে ব্যক্তি কোন জিম্মীকে হত্যা করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরত্ব হতে পাওয়া যাবে। -[বুখারীঃ ৬৯১৪; নাসায়ীঃ ৪৭৫০; আহমাদঃ ৬৭০৬]


●●● আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত; তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ উট, তীর, ঘোড়া (যুদ্ধাস্ত্র চালানো) ছাড়া অন্য বস্তুতে প্রতিযোগিতা নেই। -[আবু দাউদঃ ২৫৭৪; তিরমিযীঃ ১৭০০]


●●● উক্ববাহ ইবনু আমির (রা) হতে বর্ণিত; তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে মিম্বরের উপরে ওয়া আ'ইদ্দুল্লাহুম' এ আয়াতটি পড়তে শুনেছি, তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেছিলেন, তোমরা সজাগ হও শর নিক্ষেপেই শক্তি । সজাগ হও, শর নিক্ষেপেই শক্তি রয়েছে। সজাগ হও শর নিক্ষেপেই শক্তি রয়েছে। (অর্থাৎ তীর নিক্ষেপে তখনকার দিনে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। সমসাময়িক কালে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজন বলে যা সাব্যস্ত হবে সেটাকে আয়ত্ব করা মুজাহিদগণের কর্তব্য)। -[মুসলিমঃ ১৯৭১; আবু দাউদঃ ২৫৭৯; বুলুগুল মারামঃ ১৩১৮]


●●● আয়িয ইবনু আমর মুযানী (রা) হতে বর্ণিত; নাবী (সা) বলেনঃ ইসলাম উঁচু থাকবে নীচু হবে না। -[দারকুতনীঃ ৩য় খন্ড, হা নং ৩১; বুলুগুল মারামঃ ১৩০৯]


Post a Comment