মুসয়াব ইবন উমাইর (রা) : পার্থিব জীবন উৎস্বর্গের অনন্য নমুনা


হযরত মুসয়াব ছিলেন প্রখর মেধাবী, উদার ও প্রাঞ্জলভাষী বাগ্মী। যে দ্রুততার সাথে ইয়াসরিবে (মদীনা) ইসলাম প্রসার লাভ করেছিল তাতেই তার এসব গুণের প্রমাণ পাওয়া যায়। তার শাহাদাত পর্যন্ত যতটুকু কুরআন নাযিল হয়েছিলো, তিনি মুখস্ত করেছিলেন। মদীনায় সর্বপ্রথম তিনিই জুমুআর নামায কায়েম করেন।

[ইসলাম গ্রহণের পর] প্রাণপ্রিয় ছেলেকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে বের করে দিতে দিতে মা বলছেঃ ‘তোমার যেখানে খুশি যাও। আমাকে আর মা বলে ডেকো না’। ছেলে একটু মায়ের দিকে এগিয়ে বললেনঃ ‘মা আমি আপনাকে ভালো কথা বলছি, আপনার প্রতি আমার দারুণ মমতা রয়েছে। আপনি একবার একটু বলুন, আশহাদু আন-লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু’।
মা উত্তেজিত হয়ে নক্ষত্ররাজির নামে কসম খেয়ে বললেনঃ ‘আমি তোমার দ্বীন গ্রহণ করব না। তোমার দ্বীন গ্রহণ করলে আমার মতামত ও বুদ্ধি বিবেক দুর্বল বলে মনে করা হবে।’

পিতা-মাতার পরম আদরে ঐশ্বর্যের মধ্যে লালিত মক্কার অন্যতম সুদর্শন যুবক ছিলেন তিনি। মা সম্পদশালী হওয়ার কারণে অত্যন্ত ভোগ-বিলাসের মধ্যে তাঁকে প্রতিপালন করেন। তখনকার যুগে মক্কার যত রকমের চমৎকার পোষাক ও উৎকৃষ্ট খুশবু পাওয়া যেত সবই তিনি ব্যবহার করতেন। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে কোনভাবে তার প্রসঙ্গ উঠলে বলতেনঃ “মক্কায় মুসআবের চেয়ে সুদর্শন এবং উৎকৃষ্ট পোষাকধারী আর কেউ ছিল না।” (তাবাকাত) ঐতিহাসিকেরা বলেছেনঃ “তিনি ছিলেন মক্কার সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধি ব্যবহারকারি।

উহুদে তিনি শাহাদাত বরণ করলেন। তাকে কাফন দেওয়ার জন্য একপ্রস্থ চাদর ছাড়া আর কোন কাপড় পাওয়া গেলো না। তা দিয়ে তার মাথা ঢাকলে পা এবং পা ঢাকলে মাথা বেরিয়ে যাচ্ছিলো। শেষমেষ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বললেনঃ চাদর দিয়ে মাথার দিক থেকে যতটুকু ঢাকা যায় ঢেকে দাও বাকী পায়ের দিকে ‘ইখযীর’ ঘাস দাও।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসয়াবের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে পাঠ করেনঃ ‘মিনাল মু’মিনীনা রিজালুন সাদাকু আহদুল্লাহ আলাইহি… মুমিনদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার সত্যে পরিণত করেছে। তারপর তার কাফনের চাদরটির প্রতি তাকিয়ে বলেনঃ আমি তোমাকে মক্কায় দেখেছি। সেখানে তোমার চেয়ে কোমল চাদর এবং সুন্দর যুলফী আর কারো ছিলো না। আর আজ তুমি এখানে এই চাদরে ধূলিমলিন অবস্থায় পড়ে আছ। তিনি আরো বলেনঃ ‘আল্লাহর রাসূল সাক্ষ্য দিচ্ছে, কিয়ামতের দিন তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে সাক্ষ্যদানকারী হবে।’

তারপর সঙ্গীদের দিকে ফিরে তিনি বলেনঃ ‘ওহে জনমন্ডলী, তোমরা তাদের যিআরত কর, তাদের কাছে এস, তাদের ওপর সালাম পেশ কর। যাঁর হাতে আমার জীবন সেই সত্তার শপথ, কিয়ামত পর্যন্ত যে কেউ তাদের ওপর সালাম পেশ করবে তারা সেই সালামের জওয়াব দেবে।”

আসহাবে রাসূলের জীবনকথা- প্রথম খন্ড

1 Comments

Post a Comment