যাকাত বিষয়ক হাদীস


●●● নাবী (সা) মু'আয (রা) কে ইয়ামান দেশে (শাসক হিসেবে) প্রেরণ করেন। অতঃপর বললেন, সেখানকার অধিবাসীদেরক এ সাক্ষ্য দানের প্রতি আহ্বান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রসূল। যদি সেটা তারা মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত করে যে আল্লাহ তাদের উপর তাদের সম্পদের মধ্য থেকে সাদকাহ (যাকাত) ফরয করেছেন। যেটা ধনীদের নিকট হতে গৃহীত হবে আর দরিদ্রদের মাঝে প্রদান করা হবে। যদি সেটা তারা মেনে নেয় তবে তুমি তাদের কেবল ভালো ভালো সম্পদ যাকাত হিসেবে গ্রহণ করা হতে সাবধান থেকো। আর মাযলুমের ফরিয়াদকে ভয় করবে। কেননা, তার ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকে না।" -[বুখারীঃ ১৪৫৮, ১৪৯৬; মুসলিমঃ ১৯; নাসায়ীঃ ২৪২৫]


●●● আলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন- তোমার নিকট দুইশত দিরহাম জমা হবার পর গচ্ছিত থাকার মেয়াদ বছর পূর্ণ হলে তার জন্য- পাঁচ দিরহাম (যাকাত)। আর বিশটি দিনার এক বছর যাবত জমা থাকলে তার জন্য অর্ধ দিনার (যাকাত)। তার চেয়ে কম যাকাত নেই। আর বেশি হলে তার হিসাব অনুপাতে (যাকাত দিতে) হবে। নিসাব পরিমাণ কোন সম্পদের (গচ্ছিত থাকার) মেয়াদ এক বছর অতিবাহিত না হলে যাকাত নেই। (স্বর্ণমুদ্রা হচ্ছে দিনার আর রৌপ্যমুদ্রা হচ্ছে দিরহাম)। -[আবু দাউদঃ ১৫৭৩, ১৫৭৪; তিরমিযীঃ ৬২০]


●●● আনাস (রা) হতে বর্ণিত যে, আবু বকর (রা) আনাস (রা) এর নিকট রাসূল (সা) কে আল্লাহ তা'আলা যাকাত সম্পর্কে যে বিধান দিয়েছেন সে সম্পর্কে লিখে জানালেন, যা আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিয়েছে। তা হচ্ছে, চব্বিশ ও তার চেয়ে কম সংখ্যক উটের যাকাত বকরী দ্বারা আদায় করা হবে। প্রতিটি পাঁচটি উটে একটি বকরী এবং উটের সংখ্যা পঁচিশ হতে পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত হলে একটি মাদী বিনতে মাখায (যে উটনীর বয়স এক বছর পূর্ণ হয়ে দ্বিতীয় বছরে পদার্পণ করেছে)। উটের সংখ্যা ছত্রীশ হতে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত হলে একটি মাদী বিনতে লাবূন (যে উটনীর বয়স দু'বছর পূর্ণ হয়ে তৃতীয় বছরে পড়েছে)। উটের সংখ্যা ছয়চল্লিশ হতে ষাট পর্যন্ত হলে ষাঁড়ের পালযোগ্য একটি হিক্কাহ (হিক্কাহ হলো এমন উটনী, যার বয়স তিন বছর পূর্ণ হয়ে চতুর্থ বছরে উপনীত হয়েছে)। উটের সংখ্যা একষট্টি হতে পঁচাত্তর পর্যন্ত হলে একটি জাযা'আ (যে উটনীর বয়স চার বছর পূর্ণ হয়ে পঞ্চম বছরে প্রবেশ করেছে)। ছিয়াত্তর হতে নব্বই পর্যন্ত দুটি বিনতে লাবূন, একনব্বইটি হতে একশ বিশ পর্যন্ত ষাঁড়ের পালযোগ্য দু'টি হিক্কা আর একশত বিশের বেশি হলে প্রতি চল্লিশটিতে একটি করে বিনতে লাবূন এবং (অতিরিক্ত) প্রতি পঞ্চাশটিতে একটি করে হিক্কাহ। যার চারটির বেশি উট নেই, সেগুলোর উপর কোন যাকাত নেই, তবে মালিক স্বেচ্ছায় কিছু দিতে চাইলে দিতে পারবে।

আর বকরীর যাকাত সম্পর্কে - গৃহপালিত বকরী চল্লিশটি হতে একশ বিশটি পর্যন্ত একটি বকরী। এর বেশি হলে দু'শটি পর্যন্ত দুটি বকরী । দু'শর অধিক হলে তিন'শ পর্যন্ত তিনটি বকরী। তিন'শর অধিক হলে প্রতি একশ' তে একটি করে বকরী। কারো গৃহপালিত বকরীর সংখ্যা চল্লিশ হতে একটিও কম হলে তার উপর যাকাত নেই। বয়স্ক, দাঁত পড়া, ত্রুটিযুক্ত ও পাঠা যাকাত দেওয়া যাবে না। -[বুখারী, নাসায়ী, আবু দাউদ, বুলুগুল মারামঃ ৬০০]


●●● মু'আয বিন জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত। নাবী (সা) তাকে ইয়ামানে পাঠিয়েছিলেন এবং তাঁকে প্রতি ৩০ টি গরুর জন্য ১ টি তাবী (১ বছর বয়সের বকনা বাছুর) গ্রহণ করতে আর প্রতি ৪০ টি গরুতে একটি মুসিন্না বা দু'বছরের গাভী অথবা বলদ গ্রহণ করতে বলেছেন। আর প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক অমুসলিমের নিকট হতে এক দিনার বা তার সমমূল্যের মু'আফিরী কাপড় নিতে আদেশ দিয়েছিলেন। -[ইবনু মাজাহ, তিরমিযী, নাসায়ী, বুলুগুল মারামঃ ৬০১]


●●● আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। নাবী (সা) বলেছেনঃ মুসলিমের উপর তার গোলাম ও ঘোড়ার কোন যাকাত নেই। -[বুখারীঃ ১৪৬৩; মুসলিমঃ ৬১৯; তিরমিযীঃ ৬২৮]


●●● ইবনু উমার (রা) হতে বর্ণিত, কারো কোন সম্পদ সঞ্চিত হলে তার গচ্ছিত অবস্থার উপর একটি বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য যাকাত ফরয হয় না। -[তিরমিযীঃ ৬৩১; মুয়াত্তা মালেকঃ ৬৫৭]


●●● সালাম বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। নাবী (সা) বলেছেন- বৃষ্টি ও প্রবাহিত পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা সেচ ব্যতীত উর্বরতার ফলে উৎপন্ন ফসলের উপর (দশমাংশ) উশর ওয়াজিব হয়। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের উপর অর্ধ উশর (বিশ ভাগের এক ভাগ)। -[বুখারীঃ ১৪৮৩; তিরমিযীঃ ৬৪০; বুলুগুল মারামঃ ৬১৫]

Post a Comment