রাসূলের (সা) প্রতি বিরুদ্ধাচরণের বিভিন্ন পন্থাঃ ২য় পর্ব


এ পর্যায়ে, নাবী (সা) এর শিক্ষা-দীক্ষার বিষয়াদির বিকৃতি করা, জনমনে সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি করা এবং মিথ্যা ও অপপ্রচার করাই ছিলো কুরাইশগণের আরেকটি বিরুদ্ধাচরণ পন্থা । মুশরিকগণ যেমন কুরআন সম্পর্কে বলেছেন 'এসব অলীক স্বপ্ন' রাতে তৈরী করে আর দিনে সে তিলাওয়াত করে 'সে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে' অর্থাৎ সে নিজের পক্ষ থেকে বানিয়েছে এবং তারা এও বলতো যে, 'এক মানুষ তাকে শিখিয়ে দেয়' (আন নাহলঃ ১০৩) । তারা (কাফিররা) বলে, 'এটা মিথ্যা ছাড়া কিছু নয়, সে তা (কুরআন) উদ্ভাবন করেছে এবং ভিন্ন জাতির লোক এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করেছে' (আল ফুরকানঃ ৪) ।

মুশরিকরা সবচেয়ে বেশি সন্দেহ ছিলো প্রথমত তাওহীদ বিষয়ে, দ্বীতিয়ত মুহম্মদ (সা) এর নবুওয়াতের বিষয়ে, তৃতীয়ত মৃতদের পুনরুজ্জীবিত হওয়ার বিষয়ে । আর কুরআন এ বিষয়ে তাদেরকে যথোপযুক্ত জবাব তো দিয়েছেই, বরং অনেক ক্ষেত্রে বেশি ও বিস্তারিত আকারে আলোচনা করেছে যেন এ বিষয়ে আর আলোচনা করার অবকাশ নেই ।

মক্কার মুশরিকদের আক্বিদায় তখন এমন একটা বিষয় ছিলো, 'কোন মানুষ রাসূল হতে পারে না, তেমনি কোন রাসূল কক্ষণো মানুষ হতে পারে না' । ফলে রাসূলুল্লাহ (সা) যখন নবুওয়াতের ঘোষণা দিলেন আর মানুষদেরকে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করতে আহ্বান করলেন, তখন তারা বলে উঠলোঃ "এ কেমন রাসূল যে খাবার খায়, আর হাটবাজারে চলাফেরা করে?' (আল ফুরকানঃ ৭)

অধিকন্তু তাদের জানা রয়েছে যে ইবরাহীম, ইসমাইল, মূসা (আ)- তারা সসকলেই মানুষ ও নাবী ছিলেন, যে ব্যাপারে তাদের সন্দেহের কোন সুযোগ নেই । কাজেই তারা বলে, আল্লাহ এই দরিদ্র, ইয়াতীম ব্যতীত আর কাউকে রিসালাতের দায়িত্ব দিতে পারলেন না?

আর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ "নবুওয়াতের দায়িত্ব কার উপর অর্পণ করবেন তা আল্লাহ ভালভাবেই অবগত ।" (আল আন'আমঃ ১২৪)

কাফিরদের আরেকটি সন্দেহর বিষয় ছিলো, 'মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত হওয়া' । এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ "কাফিরগণ বলে- তোমাদের কি আমরা এমন একজন লোকের সন্ধান দেব যে তোমাদেরকে খবর দেয় যে, তোমরা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলেও তোমাদেরকে নতুনভাবে সৃষ্ট (পুনরায় জীবিত) করা হবে? সে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে, না হয় সে পাগল । বস্তুতঃ যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তারাই শাস্তি এবং সুদূর গোমরাহীতে পড়ে আছে ।"

এভাবে একের পর এক তাদের সন্দেহের জবাব দেওয়া হয়েছে এমন প্রজ্ঞাপূর্ণভাবে ও গভীর দৃষ্টিকোণ থেকে যা প্রত্যেক চিন্তাশীল ও প্রশস্ত জ্ঞানের অধিকারীদের তৃপ্তিদান করেছে । কিন্তু মুশরিকদের উদ্দেশ্য তো কেবল অহংকার ও বড়ত্ব প্রকাশ করা এবং আল্লাহর জমীনে ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টি করা ।

সূত্রঃ আর রাহীকুল মাখতুম

Post a Comment