রাসূল (সা.) এর প্রকাশ্য দ্বীন প্রচার শুরুঃ ৩য় পর্ব


যখন নাবী কারীম (সা.) খুব ভালোভাবে নিশ্চিত হলেন যে, আল্লাহর দ্বীন প্রচারের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে আবু ত্বালিব তাকে সাহায্য করবেন তখন এক দিবসে তিনি সাফা পর্বত শিখরে আরোহন করলেন এবং তার উপর আরেকটি পাথর রেখে তথায় দাঁড়িয়ে জন সাধারণকে আহ্বান করলেন, হায় প্রাতঃকাল (কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিচার কিংবা প্রতিকার প্রার্থী হলে প্রাতঃকাল বলে পাহাড়ের উপর থেক চিৎকার করত), তা শ্রবণ করে কুরাইশ গোত্রের লোকেরা সেখানে যখন সমবেত হলেন তখন তিনি সকলকে লক্ষ্য করে আল্লাহর একত্ববাদ, স্বীয় নবুওয়াত এবং পরকালীন জীবনের উপর বিশ্বাস স্হাপনের জন্য অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় সকলকে আহ্বান জানালেন । এই ঘটনার এক অংশ সহীহুল বুখারীতে ইবনে আব্বাস কর্তৃক এইভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ

যখন (ﻭﺍﻧﺬﺭ ﻋﺸﻴﺮﺗﻚ ﺍﻟﺎﻗﺮبي) আয়াত অবতীর্ণ হল তখন নাবী কারীম (সা.) সাফা পর্বত শিখরে আরোহণ করে কুরাইশ গোত্রের সকলকে লক্ষ্য করে বিশেষ কিছু শব্দ উচ্চারণ করে চিৎকার করতে থাকলেনঃ

ওহে বনু ফিহর! ওহে বনু আদী! (ওহে বনু অমুক, ওহে বনু অমুক, ওহে বনু আবেদ মানাফ, ওহে বনু আব্দুল মুত্তালিব)

যখন তারা এ চিৎকারধ্বনি শ্রবণ করে বললেন, কে এরকম চিৎকার করে আহ্বান করছে ? লোকেরা বলল, মুহাম্মদ (সা.) অতঃপর তারা সকলেই সেখানে সমবেত হয়ে গেলেন । এমনকি কোন ব্যক্তির পক্ষে তাঁর উপস্হিত সম্ভব না হলে ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য তিনি প্রতিনিধি প্রেরণ করলেন । ফলকথা হচ্ছে কুরাইশ গোত্রের সকলেই সেখানে উপস্হিত হয়েছিলেন আবু লাহাবও উপস্হিত ছিলেন ।

তারপর নাবী কারীম (সা.) বলেন

"হে কুরাইশ বংশীয়গণ! তোমরা বল, আজ (এ পর্বত শিখরে দাঁড়িয়ে) যদি আমি তোমাদেরকে বলি যে, পর্বতের অন্য দিকে এক প্রবল শত্রু সৈন্য বাহিনী তোমাদের যথা-সর্বস্ব লুন্ঠনের জন্য অপেক্ষা করছে তাহলে তোমরা এ কথার উপর বিশ্বাস স্হাপন করবে কি ?"

সকলেই সমস্বরে উত্তর করল হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, বিশ্বাস না করার কোনই কারণ নেই । আমরা কক্ষণো আপনাকে মিথ্যার সংস্পর্শে আসতে দেখি নি ।

তখন গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলতে লাগলেন,

যদি তাই হয়, তবে শ্রবণ করুন । আমি আপনাদেরকে (পাপ ও আল্লাহ দ্রোহিতার ভীষণ পরিণাম ও তজ্জনিত) অবশ্যম্ভাবী কঠোর দন্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য প্রেরিত হয়েছি........ ।

অতঃপর সাধারণ ও বিশেষভাবে সকলকে সত্যের পথে আহ্বান জানালেন এবং তাদেরকে আল্লাহর কঠিন শাস্তি ভয় প্রদর্শন করে বললেন-

"হে কুরাইশগণ, তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর এবং তোমাদের নিজেদেরকে আল্লাহর নিকট সপে দিন তার সন্তুষ্টি অর্জন করো ।"

"হে বনু কাব বিন লুআই, তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর । কেননা আমি তোমাদের কোন উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখি না । "

"হে বনু কা'ব বিন মুররাহ, তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর"

"হে বনু কুসাই সম্প্রদায়, তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর । কেননা আমি তোমাদের কোন উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখি না । "

"হে বনু আবে শামস, তোমরা নিজেদের কে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচাও "

"হে বনু হাশিম, তোমরা নিজেদের কে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচাও । "

"হে বনু আব্দুল মুত্তালিব সম্প্রদায়, তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচাও । "

"হে বনু ফাতিমাহ বিনতে মুহাম্মদ! তুমি নিজেকে দোযখ থেকে বাঁচাও"

"হে বনু আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব, তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর কেননা আমি তোমাদের কোন উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাাখি না "

যখন এ ভীতিপ্রদর্শনমূলক বক্তব্য শেষ হলো সম্মেলন ভেঙ্গে গেল ও লোকজন যার যার মতো চলে গেল, কেউ কোন প্রতিবাদ করলো না । কিন্তু আবু লাহাব মন্দ উদ্দেশ্য নিয়ে নাবী (সা.) এর নিকটে এসে বলে উঠলেন, 'তোর সর্বনাশ হোক'! এ জন্য কি তুই এখানে আমাদেরকে সমবেত করছিস ? এর ফলশ্রুতিতে আয়াতে কারীমা অবতীর্ণ হলোঃ

'আবু লাহাবের হাত ধ্বংস হোক' -(লাহাব ১১১: ১)

-সূত্রঃ আর-রাহীকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা নং ১০৬, ১০৭

Post a Comment