সালমান আল ফারেসি (রা) : তাকওয়ার বাস্তব নমুনা যিনি


হযরত সালমান আল ফারেসি রাদিয়াল্লাহু আনহু সেই সব বিশিষ্ট সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত যাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ নৈকট্য লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেন। হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেদিন রাতে সালমানের সাথে নিভৃতে আলোচনা করতে বসতেন, আমরা তাঁর স্ত্রীরা ধারণা করতাম সালমান হয়তো আজ আমাদের রাতের সান্নিধ্যটুকু কেড়ে নেবে।

যুহদ ও তাকওয়ায় তিনি ছিলেন বাস্তব নমুনা। ক্ষণিকের মুসাফির হিসেবে তিনি জীবন যাপন করেছেন। জীবনে কোন বাড়ি তৈরি করেননি। কোথাও কোন প্রাচীর বা গাছের ছায়া পেলে সেখানেই শুয়ে যেতেন। এক ব্যক্তি তাঁর কাছে ইজাজত চাইলো, তাকে একটি ঘর বানিয়ে দেওয়ার। তিনি নিষেধ করলেন। বারবার পীড়াপীড়িতে শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "কেমন ঘর বানাবে?"। লোকটি বললো, "এত ছোট যে, দাঁড়ালে মাথায় চাল বেঁধে যাবে এবং শুয়ে পড়লে দেয়ালে পা ঠেকে যাবে। এ কথায় তিনি রাজী হলেন। তার জন্য একটি ঝুপড়ি ঘর তৈরি করা হয়। হযরত হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ "সালমান যখন পাঁচ হাজার দিরহাম ভাতা পেতেন, তিরিশ হাজার লোকের উপর প্রভুত্ব করতেন কখনো তার একটি মাত্র আবা ছিলো। তার মধ্যে ভরে তিনি কাঠ সংগ্রহ করতেন। ঘুমানোর সময় আবাটির একপাশ গায়ে দিতেন এবং অন্য পাশ বিছাতেন।

হযরত সালমান (রা) যখন রোগশয্যায়, হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা) তাকে দেখতে যান। সালমান (রা) কাঁদতে শুরু করলেন। সা'দ বললেনঃ "আবু আবদিল্লাহ, আপনি কাঁদছেন কেন? রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো আপনার প্রতি সন্তষ্ট অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। হাউজে কাওসারের নিকট তাঁর সাথে আপনি মিলিত হবেন। "

বললেন, "আমি মরণ ভয়ে কাঁদছিনে। কান্নার কারণ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, আমাদের সাজ-সরঞ্জাম যেন একজন মুসাফিরের সাজ-সরঞ্জাম থেকে বেশি না হয়। অথচ আমার কাছে এতগুলি জিনিসপত্র জমা হয়ে গেছে।"

সা'দ বলেনঃ সেই জিনিসগুলি একটি বড় পিয়ালা, তামার একটি থালা ও একটি পানির পাত্র ছাড়া আর কিছু নয়।


তথ্যসূত্রঃ উপরিউক্ত জীবনী অংশটুকু আসহাবে রাসূলের জীবনকথা (প্রথম খন্ড) থেকে হুবহু উদ্ধৃত হয়েছে।

1 Comments

Post a Comment