ইসলাম গ্রহণের কারণে সাহাবীদের উপর নির্মম অত্যাচার


নবুওয়াতের চতুর্থ বছরে যখন প্রথমবার সর্ব সাধারণের নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করা হল, তখন মুশরিকগণ তা প্রতিহত করার কৌশল হিসেবে ঐ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন যা ইতোপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। এ কৌশল কার্যকর করার ব্যপারে তাঁরা ধীরে চলার নীতি অবলম্বন করে অল্প অল্প করে অগ্রসর হতে থাকেন এবং এভাবে এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাঁরা কোন প্রকার অন্যায় অত্যাচার আরম্ভ করেন নি। কিন্তু তাঁরা যখন এটা বুঝতে পারলেন যে, তাঁদের ঐ কৌশল ও ব্যবস্থাপনা ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপ্তিলাভের বিরুদ্ধে তেমন কার্যকর হচ্ছে না, তখন তাঁরা সকলে পুনরায় এক আলোচনা চক্রে মিলিত হন এবং মুসলিমদের শাস্তি প্রদান ও তাদেরকে ইসলাম থেকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক গোত্রপতি তার গোত্রের ইসলাম গ্রহণকারীদের শাস্তি প্রদান করা শুরু করে দিলো।

আবু জাহল যখন কোন সম্ভ্রান্ত বা শক্তিধর ব্যক্তির মুসলিম হওয়ার কথা শুনত তখন সে তাকে ন্যায়-অন্যায় বলে গালি গালাজ করত, অপমান-অপদস্থ করতো এবং ধন-সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করবে বলে ভয় দেখাতো। জ্ঞাতী গোষ্ঠীর যদি কোন দুর্বল ব্যক্তি মুসলিম হতো, তাহলে তাকে সে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে মারধোর করত এবং মারধোর করার জন্য অন্যদের প্ররণচিত করত।

উসমান বিন আফ্ফানের চাচা তাঁকে খেজুর পাতার চাটাইয়ের মধ্যে জড়িয়ে রেখে আগুন লাগিয়ে ধোঁয়া দিতো।

মুস'আব বিন উমায়ের (রা) এর মা যখন তাঁর (ছেলের) ইসলাম গ্রহণের কথা শুনতে পেল তখন সে তার খানা-পিনা (আহারাদি) বন্ধ করে দিলো এবং তাঁকে বাড়ি থেকে বেড় করে দিলো।

বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু, উমাইয়া বিন খালাফ জুমাহীর ক্রীতদাস ছিলেন। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় উমাইয়া তাঁর গলায় দড়ি বেঁধে ছোকরাদের হাতে ধরিয়ে দিতো। তারা সেই দড়ি ধরে তাঁকে পথে প্রান্তের টেনে হিঁচড়ে নিয়ে বেড়াতো। তাঁকে খানা-পিনা না দিয়ে ক্ষুধার্থ ও পিপাসার্ত রাখতো। এসবের চেয়েও অনেক বেশি কঠিন ও কষ্টকর হতো তখন, যখন দুপুর বেলা প্রখর রৌদ্রে আগুনের মতো উত্তপ্ত কংকর ও বালির মধ্যে শুইয়ে দিয়ে বুকের উপর পাথর চাপা দেয়া হতো।

আম্মার বিন ইয়াসির বনু মাখযূমের ক্রীতদাস ছিলেন। তাঁর পিতার নাম ইয়াসির এবং মাতার নাম সুমাইয়া। তিনি এবং তাঁর পিতামাতা একই সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের কারণে তাদের উপর ভয়ানক অত্যাচার শুরু হয়। আবু জাহলের নেতৃত্বে মক্কার মুশরিকগণ দুপুরের প্রখর রৌদ্রে মরুভূমির উত্তপ্ত বালি এবং কংকেরের উপর শুইয়ে শাস্তি দিতো। এক দিবসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পথিমধ্যে তাদের এই শাস্তি দেখে বললেনঃ 'হে ইয়াসিরের বংশধর! ধৈর্য্য ধারণ করো, তোমাদের স্থান জান্নাতে!' অতঃপর শাস্তি চলা অবস্থায় ইয়াসিরের মৃত্যু হয়। পাষণ্ড আবু জাহল 'আম্মারের মা সুমাইয়ার নারী অঙ্গে বর্শা বিদ্ধ করে। অতঃপর তিনি মারা যান। মুসলিম মহিলাদের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম শহীদ। আম্মারের উপর নির্যাতন চলতেই থাকে। মুশরিকগণ তাঁকে বলতো, যতক্ষণ না তুমি মুহাম্মদ (সা) কে গালমন্দ দেবে, ততক্ষণ তোমাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে না। এক পর্যায়ে নেহাৎ নিরুপায় হয়ে 'আম্মার (রা) তাদের কথা মেনে নিলেন। পরবর্তীতে নবী কারীমের দরবারে উপস্থিত হয়ে কান্না বিজড়িত কণ্ঠে ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। এ প্রেক্ষিতে এ আয়াত কারীমা অবতীর্ণ হলোঃ "কোন ব্যক্তি তার ঈমান আনার পর আল্লাহকে অবিশ্বাস করলে এবং কুফরীর জন্য তার হৃদয় খুলে দিলে তার উপর আল্লাহর গজব পতিত হবে, আর তার জন্য আছে মহা শাস্তি, তবে তার জন্য নয় যাকে (কুফরীর জন্য) বাধ্য করা হয়েছে অথচ তার দিল ঈমানের উপর অবিচল থাকে।" -(আন-নাহল: ১০৬)

আবু ফুকাইহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বনু আব্বাসের গোত্রের দাস ছিলেন। সে ছিলো আযদীদের অন্তর্ভুক্ত। তার অপর নাম ছিলো আফলাহ। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কারণে তাঁর মালিক পায়ে লোহার শিকল বেঁধে শরীর হতে কাপড় খুলে নিয়ে কংকরময় পথ ও প্রান্তরে টেনে নিয়ে বেড়াতেন। অতঃপর তার পিঠের উপর ভারী পাথর চাপা দিতো ফলে তিনি নড়াচড়া করতে পারতেন না। এভাবে শাস্তি দেয়ার এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এমন শাস্তি চলছিল নিয়মিতভাবে। ইত্যবসরে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু সে পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ক্রয় করে আল্লাহর ওয়াস্তে আযাদ করে দিলেন।

-সূত্র: আর-রাহীকুল মাখতুম

2 Comments

  1. অল্পতে খুব সুন্দর ভাবে লিখা হয়েছে।

    ReplyDelete
  2. Zazak Allahu khairan

    ReplyDelete

Post a Comment