আবু যার (রা) : একজন স্বল্পভাষী লোক


হযরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা মোট আটাশ। তন্মধ্যে বারোটি হাদিস মুত্তাফাক আলাইহি অর্থাৎ বুখারী ও মুসলিম উভয়ে বর্ণনা করেছেন। দু’টি বুখারী এবং সাতটি মুসলিম এককভাবে বর্ণনা করেছেন।

অন্যদের তুলনায় তার বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা এত কম হওয়ার কারণ তিনি সবসময় চুপচাপ থাকতেন, নির্জনতা পছন্দ করতেন। এ কারণে তার জ্ঞানের তেমন প্রচার হয়নি। অথচ হযরত আনাস ইবন মালিক, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস প্রমুখের ন্যায় বিদ্বান সাহাবীগণ তার নিকট থেকে জ্ঞান অর্জন করেছেন। ইবন আসাকির তার “তারীখে দিমাশক” গ্রন্ধে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

হযরত উসমানের খিলাফাতকালে আবু যার একবার হজ্জে গেলেন। এক ব্যক্তি এসে বললো, উসমান মিনায় অবস্থানকালে চার রাকাআন নামায আদায় করেছেন (অর্থাৎ কসর করেননি), বিষয়টি তার মনঃপুত হলো না। অত্যন্ত কঠোর ভাষায় নিন্দা করে বললেন, “রাসূলুল্লাহ (সা), আবু বকর ও উমারের পেছনে আমি নামায আদায় করেছি। তারা সকলেই দু’রাকাআত পড়েছেন। একথা বলার পর তিনি নিজেই ইমামতি করলেন এবং চার রাকাআতই আদায় করলেন।

লোকেরা বললো, “আপনিতো আমীরুল মু’মিনীনের সমালোচনা করলেন আর এখন নিজেই চার রাকাআত আদায় করলেন।”

তিনি বললেন, “মতভেদ খুবই খারাপ বিষয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,’আমার পরে যারা আমীর হবে তাদের অপমান করবেনা। যে ব্যক্তি তাদের অপমান করার ইচ্ছা করবে সে ইসলামের সুদৃঢ় রজ্জু স্বীয় কাঁধ থেকে ছুঁড়ে ফেলবে এবং নিজের জন্য তাওবার দরজা বন্ধ করে দেবে।” (মুসনাদের আহমাদ, ৫/১৬৫)

একদিন এক ব্যক্তি আবু যার আল গিফারী (রা) এর নিকট এলো। সে তার ঘরের চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখলো। গৃহস্থালীর কোন সামগ্রী দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,

– আবু যার, আপনার সামান-পত্র কোথায়?
– আখিরাতে আমার একটি বাড়ি আছে। আমার সব উৎকৃষ্ট সামগ্রী সেখানেই পাঠিয়ে দিই।

একদা সিরিয়ার আমীর তার নিকট তিনশ দিনার পাঠালেন। আর বলে পাঠালেন, এ দ্বারা আপনি আপনার প্রয়োজন পূর্ণ করুন। “শামের আমীর কি আমার থেকে অধিকতর নীচ কোন আল্লাহর বান্দাকে পেলোনা?” — একথা বলে তিনি দিনারগুলি ফেরত পাঠালেন।

তথ্যসূত্রঃ উপরিউক্ত অংশটুকু আসহাবে রাসূলের জীবনকথা (প্রথম খন্ড) থেকে হুবহু উদ্ধৃত।

Post a Comment