রাসূলের (সা) প্রতি বিরুদ্ধাচরণের বিভিন্ন পন্থাঃ ১ম পর্ব


"উপহাস, ঠাট্টা-তামাশা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ"

কুরাইশগণ যখন দেখলেন যে, মুহাম্মদ (সা) কে দ্বীনের দাওয়াত এবং তাবলিগ থেকে নিবৃত্ত করার কোন কৌশল কার্যকর হচ্ছে না তখন তাঁরা পুনরায় চিন্তাভাবনা করে তাঁর তাঁর দ্বীনী কর্মকান্ডকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে ফেলের জন্য নানামুখী পন্থা-প্রক্রিয়া অবলম্বন শুরু করলেন । আর এরই একটি 'উপহাস, ঠাট্টা-তামাশা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ' ।

বিভিন্ন অবমাননাকর উক্তি ও অকারণ হাসাহাসির মাধ্যমে নাবী কারীম (সা) কে তারা জর্জরিত ও অতিষ্ঠ করে তুলতে চাইলেন । এ অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিলো মুসলিমদের সন্দেহপরায়ণ, বিপন্ন ও ব্যতিব্যস্ত করে তাদের উদ্যম ও কাজের স্পৃহাকে নষ্ট করে দেয়া । তাঁরা কখনো তাঁকে পাগল বলেও সম্বোধন করতেন । যেমনটি ইরশাদ হয়েছেঃ

"তারা বলে, 'ওহে ঐ ব্যক্তি যার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে! তুমি তো অবশ্যই পাগল ।" (আল হিজরঃ ৬)

এ কাফিরগণ কখনো নাবী (সা) কে যাদুকর অপবাদ দিতো, কখনো অগ্রভাগে ও পেছনে ক্রোধন্বিত এবং প্রতি হিংসাপরায়ণ দৃষ্টিভঙ্গী ও মনমানসিকতা নিয়ে ঘুরাফেরা করত । এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছেঃ

"কাফিররা যখন কুরআন শুনে তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টি দিয়ে তোমাকে আছড়ে ফেলবে । আর তারা বলে সে তো পাগল ।" (আল ক্বলামঃ ৫১)

অধিকন্ত, নাবী কারীম (সা) যখন কোথাও গমন করতেন এবং তাঁর দুর্বল ও মজলুম সাহাবীগণ (রা) তাঁর নিকট উপস্থিত থাকতেন তখন তাদের লক্ষ্য করে মুশরিকরা উপহাস করতেন ।

সাধারণতঃ মুশরিকদের অবস্হা তাই ছিল যার চিত্র নিচের আয়াতসমূহে তুলে ধরা হয়েছে-

"পাপাচারী লোকেরা (দুনিয়ায়) মুমিনদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত । আর তারা যখন তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করত তখন, পরস্পরে চোখ টিপে ইশারা করতো । তারা যখন তাদের আপন জনের কাছে ফিরে আসত, তখন (মুমিনদেরকে ঠাট্টা করে আসার কারণে) ফিরত উৎফুল্ল হয়ে । তাদেরকে তো মুমিনদের হিফাযতকারী হিসেবে পাঠানো হয় নি ।" (আল মুত্বাফফিফীনঃ ২৯-৩৩)

মুশরিকদের এই উপহাস, ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও হাসাহাসি নাবী (সা) কে মর্মাহত করে তুললে, আল্লাহ তা'আলা তার অন্তরকে দৃঢ় করলেন এবং এমন বিষয়ে নির্দেশ করলেন, যাতে তার অন্তর থেকে ব্যথা-বেদনা দূরীভূত হয় । এই মর্মে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

"আমি জানি, তারা যেসব কথা-বার্তা বলে তাতে তোমার মন সংকুচিত হয় । কাজেই প্রশংসা সহকারে তুমি তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা কর, আর সাজদাহকারীদের দলভুক্ত হও । আর তোমার রবের ইবাদাত করতে থাক সুনিশ্চিত ক্ষণের (অর্থাৎ মৃত্যুর) আগমন পর্যন্ত ।" (আল হিজরঃ ৯৭-৯৯)

অধিকন্ত আল্লাহ তা'আলা আরো জানিয়ে দিয়েছেন যে, এ সব ঠাট্টা-বিদ্রুপকারীদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট । আল্লাহ বলেনঃ

"(সেই) ঠাট্টা- বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে তোমার জন্য আমিই যথেষ্ট ।" (আল হিজরঃ ৯৫)

সূত্রঃ আর-রাহীকুল মাখতুম, ১১০ পৃষ্ঠা

Post a Comment